সাধারণ জ্ঞানের জন্য আপনি যা করতে পারেন
ক) দৈনিক পত্রিকা আপনার সাধারণ জ্ঞানের ভান্ডারকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করবে। পত্রিকার পাঁচটি পৃষ্ঠা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। যথা প্রথম, শেষ, সম্পাদকীয়, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক পাতা। সময় এক ঘণ্টা।
খ) কিছু মৌলিক বই পড়তে হবে। যেমন অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বই এবং নবম-দশম শ্রেণির ইতিহাস ও পৌরনীতি বই। এই চারটি বই আপনার ধারণাকে ব্যাপক মাত্রায় প্রসারিত করবে।
গ) সব সময় বিস্তারিত পড়ার সময় পাওয়া যায় না। তাই সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটা গাইডও অনুসরণ করতে হবে। সেটা নতুন বিশ্ব হতে পারে। একটু বেশি তথ্য থাকলেও ভয় পাওয়া যাবে না। যতটুকু পারা যায়।
ঘ) সংবিধান সাধারণ জ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটিকে তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে পড়তে হবে। যথা ১) সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস, ২) গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদসমূহ এবং ৩) সংশোধনীসমূহ।
এক থেকে সাতচল্লিশ পর্যন্ত অনুচ্ছেদ ভালো করে পড়বেন। বাকি অনুচ্ছেদগুলো বাছাই করে পড়বেন।
ঙ) ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের কিছু বিষয় মনোযোগ দিয়ে পড়লেই হবে। যেমন পলাশীর যুদ্ধ, বক্সারের যুদ্ধ, নীল বিদ্রোহ, সিপাহি বিদ্রোহ ইত্যাদি।
চ) ১৯০৫ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনকে গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে।
ছ) ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত সময়কে ইতিহাস অংশে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য আপনি ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেনের লেখা বাংলাদেশের ইতিহাস: ১৯০৫-১৯৭১ বইটি পড়তে পারেন।
জ) বাংলাদেশ ও বিশ্বের দুটি মানচিত্র সংগ্রহে রাখবেন। এটা খুব বেশি পড়ার কিছু নেই। মাঝেমধ্যে একটু দেখবেন।
ঝ) বাজারে তথ্যবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন পাওয়া যায়। আপনি যেকোনো একটি সংগ্রহ করবেন এবং মাসের শুরুতেই
পড়ে ফেলবেন। কারণ, বেশি পুরোনো হলে আর পড়তে ইচ্ছা করে না।
ঞ) আন্তর্জাতিক যে ঘটনাগুলো একটু মনোযোগ দেবেন-আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধ, খণ্ড-বিখণ্ড জার্মানির একত্রীকরণ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ, জাতিসংঘের উত্থান ও অঙ্গসংগঠনসমূহ ইত্যাদি।
ট) আন্তর্জাতিক অংশে আরও তথ্য জানার জন্য ড. তারেক শামসুর রহমানের বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর বইটি দেখতে পারেন।
ঠ) ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপটসহ পড়তে চেষ্টা করুন। এতে গল্পের মতো তা মনে রাখা যায়।
ড) ভৌগোলিক বিষয়, দেশগুলোর অবস্থান, দ্বীপ, যুদ্ধ ইত্যাদি ছন্দ আকারে মনে রাখতে পারেন।
ঢ) সাম্প্রতিক বিষয় থেকে প্রশ্ন হবেই। বর্তমান সময়ে যা সবচেয়ে বেশি আলোচিত-আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, আইএসের ভূমিকা, রিও অলিম্পিক, তুরস্কের রাজনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি। সময়ের সঙ্গে এটি পরিবর্তিত হতে পারে।
ণ) সাধারণ জ্ঞান পড়ার জন্য প্রতিদিন সময় বরাদ্দ রাখবেন। কিছু সময় বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও কিছু সময় আন্তর্জাতিক
বিষয়াবলি পড়বেন।
ত) পত্রিকায়, নেটে বা অন্য কোথাও নতুন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলে তা নোটখাতায় টুকে রাখবেন। অন্যথায় কিছুদিন পর ভুলে যাবেন।
থ) বিসিএস বা যেকোনো পরীক্ষার কোনো প্রশ্ন যদি প্রাসঙ্গিকতা বা গুরুত্ব হারায়, তা আর না পড়লেও চলবে।
দ) যদি সুযোগ থাকে, টপিকস ধরে গ্রুপ স্টাডি করতে পারেন। অর্থাৎ একদিন একেকজন নির্দিষ্ট টপিক উপস্থাপনা করুন। এতে অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
ধ) একটা কথা মানতে হবে, সাধারণ জ্ঞানের পরিসীমা নেই। এর আরেকটা ঝুঁকিপূর্ণ দিক হলো, কিছু জিনিস ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়। এমনকি সকালের তথ্য বিকেলে ভিন্ন হয়ে যেতে পারে। তাই নিজ দায়িত্বে পরিবর্তিত তথ্যগুলো আপডেট করে নিতে হবে।
ন) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৬ হতে বাছাই করে কিছু তথ্য পড়ে নিতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনুসরণীয় বিষয়গুলো
ক) এটা লক্ষ করা গেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নগুলো সবচেয়ে বেশি রিপিট হয়ে থাকে। এমনকি কখনো কখনো অপশনগুলোও সিরিয়াল অনুযায়ী পর্যন্ত ঠিক থাকে। তাই বিগত বছরের বিজ্ঞান প্রশ্নগুলো খুব ভালো করে পড়বেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাখ্যাসহ পড়বেন।
খ) বিসিএসের বাইরে অন্যান্য যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হয়, সেখানেও বিজ্ঞান-সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন হয়ে থাকে। সেগুলো জব সলিউশন থেকে দেখে নেবেন।
গ) বিজ্ঞানের কিছু জিনিস চিত্র দেখে পড়বেন। এতে সহজে মনে রাখা যায়। যেমন হৃৎপিণ্ডের চিত্র দেখে আপনি খুব সহজেই হৃৎপিণ্ডের গঠন ও অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। যদি বই ও গাইডে চিত্র না থাকে, তবে নেটে একটু খোঁজ নেবেন। আশা করি, পেয়ে যাবেন।
ঘ) সময় থাকা সাপেক্ষে অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই দুটি দৈনন্দিন বিজ্ঞানের অংশ হিসেবে পড়ে নেবেন। অনেক সময় বিস্তারিত পড়লে বোঝাও সহজ হয় এবং মনে রাখাও সহজ হয়। যাঁরা বিজ্ঞানে দুর্বল, তাঁদের জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
ঙ) একটি গাইড অবশ্যই সংগ্রহে রাখবেন, যেখানে সিলেবাসের সঙ্গে মিল রেখে আলোচনা করা হয়েছে। এমপিথ্রি দৈনন্দিন বিজ্ঞান গাইড হতে পারে।
চ) টপিকসগুলোর গুরুত্ব ঠিক করবেন বিগত সালের প্রশ্নের উপস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে। অর্থাৎ যা আসছে তার প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ছ) বিজ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো আলো, তাপ, শব্দ, বিদ্যুৎ, গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, বিভিন্ন পরিমাপক যন্ত্র, চুম্বকত্ব, টিস্যু, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, খাদ্য ও পুষ্টি, রোগ, কসমিক রে ইত্যাদি। এগুলো আগে পড়বেন।
জ) কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির জন্য সময় থাকা সাপেক্ষে প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের এইচএসসি কম্পিউটার বইটি পড়বেন। অনেক কিছুর ভালো ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।
ঝ) বিভিন্ন ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষায় কম্পিউটারের ওপর ভালো মানের প্রশ্ন হয়ে থাকে। যদি সম্ভব হয়, একবার দেখে নেবেন। অন্তত সরকারি ব্যাংকগুলোর কম্পিউটার-বিষয়ক প্রশ্ন দেখবেন।
ঞ) কম্পিউটার অংশের জন্য একটা গাইডই যথেষ্ট। সেটা হতে পারে জর্জের লেখা ইজি কম্পিউটার।
ট) কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিকস হলো কি-বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ কির কাজ, স্মৃতিসংক্রান্ত পরিমাপ, কম্পিউটারের ইতিহাস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট-ব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তির বড় প্রতিষ্ঠান ও তাদের কাজ, এমএস এক্সেলের মূল কাজ ইত্যাদি।
ঠ) দৈনিক কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করার জন্য বরাদ্দ রাখবেন। প্রস্তুতিটা ধাপে ধাপে সামনের দিকে নিয়ে যাবেন।
ড) যদি কারও কাছে কোনো বিষয় কঠিন লাগে, তাহলে মৌলিক বইগুলোতে দেখে নিন। এতে সহজ হতে পারে।
ঢ) তথ্য ও প্রযুক্তির দিকপালদের সংক্ষিপ্ত কর্ম ও জীবন সম্পর্কে ধারণা নিন। যেমন বিল গেটস, স্টিভ জবস, জেরি ইয়াং ইত্যাদি।
ণ) নতুন কোনো আলোচিত ও আলোড়িত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হলে তার ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করুন।
ত) টেকনিক্যাল টার্ম সম্পর্কে ভালো ধারণার জন্য প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারও সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
থ) বিজ্ঞান বিভাগে যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা আবার এই বিষয়টি তত হালকাভাবে নেবেন না। তাহলে জানা জিনিসও ভুল হয়ে যেতে পারে।
দ) কাজকে সহজ করতে সরকার যদি বিশেষ কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তবে তা জেনে নেবেন। এটা দৈনন্দিন জীবনে আইসিটির ব্যবহার অংশে প্রশ্ন হতে পারে।
ধ) পদার্থ, রসায়ন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাঁরা সর্বশেষ ও আলোচিত ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে একটু জানুন। বিশেষ করে, নোবেল পাওয়ার সাল ও কারণ মনে রাখুন।
ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অংশে ভালো করার পরামর্শ
ক) মাধ্যমিক ভূগোল ও পরিবেশ বইটি পড়ে নেবেন। এমসিকিউ হতে পারে এমন বিষয়গুলো দাগিয়ে পড়বেন।
খ) কপ-এর প্রথম, সর্বশেষ ও পরবর্তী সম্মেলন সম্পর্কে জেনে রাখবেন। ব্যতিক্রম কিছু অর্জন হলে মনে রাখবেন।
গ) বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের যেকোনো তথ্য সামনে এলে মনে রাখার চেষ্টা করুন।
ঘ) পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার চুম্বক অংশ মনে রাখুন।
ঙ) গুরুত্বপূর্ণ দুর্যোগের সালগুলো মনে রাখুন। সম্প্রতি যদি কোনো দুর্যোগ হয় তার নাম, তারিখ, উৎপত্তি এবং সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল সম্পর্কে জেনে রাখবেন।
চ) এ জামান চৌধুরীর রেডিক্যাল ভূগোল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গাইডটা সহায়ক হতে পারে।
ছ) পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য-সংক্রান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলো একটু দেখবেন।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশের জন্য নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
ক) মোজাম্মেল হকের লেখা উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি ও সুশাসন প্রথম পত্র বইটা পড়বেন।
খ) টিআই ও টিআইবির সর্বশেষ রিপোর্ট ও বাংলাদেশের অবস্থান জেনে রাখবেন।
গ) স্মার্ট সিরিজের একটা গাইড এই অংশের জন্য একটু দেখে নেবেন।
ঘ) দুর্নীতিবিরোধী সব দিবস ও এর প্রতিপাদ্য মনে রাখুন।
ঙ) বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি সম্পর্কে জানুন। সম্প্রতি ঘটলে আরও গুরুত্বপূর্ণ।
চ) নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন সম্পর্কে মনীষীদের সংজ্ঞা ও উক্তি মনে রাখুন।
ছ) প্রতিটি টার্মিনলজির ব্যুৎপত্তি জানার চেষ্টা করুন।
জ) পরীক্ষার হলে খুব সাবধানে এই অংশের উত্তর দেবেন। কারণ, কিছু প্রশ্নের সব কটিকেই সঠিক মনে হয়।