ক্লিওপেট্রার রুপের রহস্য!
মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দরী নারী হিসেবে পরিচিত মিশরের রানী ক্লিওপেট্রা। তার সৌন্দর্য, প্রতিভা, দেহ গঠন শতাব্দী ধরেই প্রশংসিত হয়ে আসছে। তার যাদুকরী রুপের রহস্য কী ছিল এবং তিনি তার জন্য কী ব্যবহার করতেন তা জানার আগ্রহ আছে সবার। সৌভাগ্যবশত তার সৌন্দর্যের গোপন রহস্য নথিভুক্ত করা হয়েছিল বলে আমারা তা আজও জানতে পারি। তিনি অনেক চমৎকার ও কার্যকরী একটি বিউটি রুটিন মেনে চলতেন। চলুন তাহলে জেনে নিই এই লোভনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী কিংবদন্তী সম্রাজ্ঞীর রূপচর্চার কৌশলগুলো যা ব্যবহার করতে পারেন আপনিও।
১। দুধের গোসল
গোসলের জন্য ক্লিওপেট্রা ব্যবহার করতেন তরুণ গাধার দুধ। এরসাথে মধু ও কাঠবাদামের তেল মেশানো হত। এটাই তার নরম-কোমল ও উজ্জ্বল ত্বকের রহস্য। ক্লিওপেট্রা সম্রাজ্ঞী ছিলেন বলে তিনি দুধের মিশ্রণে পরিপূর্ণ বাথটাবে গোসল করতেন। সাধারণ মানুষদের পক্ষে তো এটা করা সম্ভব নয়! কিন্তু আপনি যেটা করতে পারেন তা হল – ৩ কাপ দুধে আধা কাপ মধু এবং ৫ টেবিল চামচ কাঠবাদামের তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন এবং মিশ্রণটি পানিতে মিশিয়ে নিয়ে গোসল করুন। এতে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে সুন্দর ও রেশম-কোমল।
২। আঙ্গুরের ফেসিয়াল
এই ফেসিয়ালটি সাধারণত রোদে পোড়া ত্বকের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর জন্য আপনাকে সবুজ আঙ্গুর থেঁতলে নিয়ে এর সাথে মধু মিশিয়ে নিতে হবে। পরিষ্কার ও ভেজা মুখে মিশ্রণটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
৩। সামুদ্রিক লবণের ফেস স্ক্রাব
ক্লিওপেট্রা তার শরীর ও চেহারার এক্সফলিয়েট করার জন্য সামুদ্রিক লবণ ব্যবহার করতেন। এই প্রাকৃতিক স্ক্রাবটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের মৃত চামড়া দূর হয় এবং ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ও কোমল। দুধ দিয়ে গোসল করার পরে এটি করতে পারেন।
৪। গোলাপের ফেসিয়াল টোনার
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় আপনার মুখ গোলাপ জল দিয়ে ধুয়ে নিন। গোলাপ জল আপনার ত্বককে নরম করবে এবং প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে হাইড্রেটেড থাকতে ও পুষ্টি পেতে সাহায্য করবে। গরমের সময় গোলাপ জল মুখে স্প্রে করলে ত্বক সতেজ ও হাইড্রেটেড থাকবে। প্রাইমারের পরিবর্তেও ব্যবহার করতে পারেন গোলাপ জল। এতে ফাউন্ডেশন খুব সহজে ত্বকে মিশবে এবং এর চমৎকার সুবাস তো বোনাস হিসেবে থাকছেই।
৫। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার দিয়ে মুখ ধোয়া
ভিনেগারের টনিকের মত কার্যকারিতা আছে যা ত্বকের ছোট ছোট কৈশিক নালীতে রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটায় এবং ত্বকের pH এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাচীন কালে ক্লিওপেট্রাও এটা জানতেন, তাই তিনি তার মুখ ধোয়ার জন্য ব্যবহার করতেন অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার। তিনি মুখ ধোয়ার জন্য এক পাত্র উষ্ণ পানিতে ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ পরিমাণ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে মুখে ঝাপটা দিতেন। আপনিও এটি করতে পারেন এবং তোয়ালে দিয়ে না মুছে মুখ এমনিতেই শুকাতে দিন। এটি করার পূর্বে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নেবেন।
৬। চোখের মেকআপ এর জন্য এন্টিমনি সালফাইড
রেড অকার (গিরিমাটি) এর সাথে চর্বি মিশিয়ে ঠোঁট রাঙানোর জন্য ব্যবহার করতেন ক্লিওপেট্রা। সেলেরি ও হেম্প একত্রে মিশিয়ে চোখের পাতায় ব্যবহার করতেন চোখকে শীতল করার জন্য। এন্টিমনি সালফাইড নামক কালো রাসায়নিক ব্যবহার করতেন চোখ, আইব্রু ও পাপড়িকে গাড় করার জন্য।
৭। নখ রাঙাতেন মেহেদি দিয়ে
সৌন্দর্যের রানী ক্লিওপেট্রা তার নখে ব্যবহার করতেন প্রাকৃতিক নেইল পলিশ মেহেদি। এতে তার নখ সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি সুন্দরও দেখাতো।
৮। মধুর ফেস মাস্ক
মধু ত্বকের জন্য অসম্ভব উপকারী। কারণ এতে ব্যাকটেরিয়ারোধী ও ত্বক সংরক্ষণকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়াও ব্রণ প্রতিরোধে ও নিরাময়ে সাহায্য করে, ত্বকের বয়স বৃদ্ধিকে ধীর গতির করে, ত্বককে ময়েশ্চারাইজ হতে ও শীতল হতে সাহায্য করে। তাই মধু ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং ত্বকের ছিদ্রগুলো উন্মুক্ত হয়।
৯। চুলের জন্য
ক্লিওপেট্রা চুলের জন্য ব্যবহার করতেন মধু (৩ টেবিল চামচ) ও ক্যাস্টর অয়েলের (১ টেবিল চামচ) মিশ্রণ। ক্যাস্টর অয়েল না পাওয়া গেলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। চুল পরিষ্কার করার পর এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল উজ্জ্বল ও কোমল হবে।
১০। ফেস মাস্ক
ত্বকের জন্য অত্যন্ত চমৎকার একটি ফেস মাস্ক ব্যবহার করতেন তিনি। আর সেটি হল – ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ৪ ফোঁটা রোজ এসেনশিয়াল অয়েল, ১ টেবিল চামচ কাঠবাদামের তেল এবং ২ চামচ প্রাকৃতিক মোম।
No comments