নোবেল পুরস্কার ২০১৮
নোবেল পুরস্কার ২০১৮
প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে ঘোষণা করার ঐতিহ্যকে মেনে ২০১৮ সালে বিভিন্ন বিষয়ের জন্য নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় যথাক্রমে ১ অক্টোবর তারিখে চিকিৎসাবিজ্ঞানে, ২ অক্টোবর তারিখে পদার্থবিজ্ঞানে, ৩ অক্টোবর তারিখে রসায়নে, ৫ অক্টোবর তারিখে শান্তিতে। এছাড়াও ৮ অক্টোবর তারিখে অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রাপকের নাম ঘোষণা করা হবে; তবে সুইডিশ একাডেমির সদস্যদের যৌন কেলেঙ্কারি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার কারণে এবছর সাহিত্যে কাউকে পুরস্কার দেয়া হয়নি।[১] এখন পর্যন্ত মোট ১০ জন ব্যক্তি এবছরের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন; যাদের মধ্য রয়েছে জাপানী (১ জন), ফরাসী(১ জন), কানাডীয় (১ জন), মার্কিন (৪ জন), ইংরেজ (১ জন), কঙ্গোর (১ জন), ইরাকী (১ জন)।
চিকিৎসাবিজ্ঞান
২০১৮ সালের
জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হয় ১
অক্টোবর তারিখে। ক্যান্সার চিকিৎসায় কীভাবে
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো যায় তার পদ্ধতি আবিস্কার করে
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ২০১৮সালের
নোবেল পুরস্কার জিতে নেন দুই বিজ্ঞানী; তারা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের জেমস
পি. এলিসন এবং জাপানের তাসুকু
হনজো।[১] ক্যান্সারের
কোষগুলিকে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বারাই আক্রমণ করে প্রতিহত করার
পদ্ধতি আবিস্কার করা এই দুই বিজ্ঞানী পুরস্কারের ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার ভাগাভাগি
করে নেবেন।
পদার্থবিজ্ঞান
লেজার গবেষণায়
অবদানের জন্য তিনজন বিজ্ঞানীকে ২০১৮ সালে
পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদাণ করা হয়। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস ২০১৮ সালের ২
অক্টোবর এই পুরস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আর্থার
অ্যাশকিন, ফরাসী জেরার
মুরু এবং কানাডার ডোনা
স্ট্রিকল্যান্ডের নাম ঘোষণা করে।[২] চোখের
চিকিৎসার ক্ষেত্রে ছোট ছোট কণা, পরমাণু, ভাইরাস ও অন্যান্য জীবন্ত কোষ
ধরার অপটিক্যাল টুইজারস আবিষ্কারের জন্য আশকিন পাবেন পুরস্কারের অর্ধাংশ। অন্যদিকে,
লেজার রশ্মিকে প্রসারিত ও বিবর্ধিত করে পুনরায় সংকুচিত করার
মাধ্যমে সবচেয়ে তীব্রতা সম্পন্ন ও শক্তিশালী লেজার পালস সৃষ্টি করায় মৌর এবং
ডোনা মোট পুরস্কারের অবশিষ্ট অর্ধেক অর্থ ভাগাভাগি করে নেবেন।
রসায়ন
৩ অক্টোবর রসায়নে নোবেল
অর্জন করেন
1. ফ্রান্সিস আর্নল্ড (USA,Field of work-Chemical engineering,Bio
engineering,Biochemistry)
2. জর্জ পি. স্মিথ (USA,Field of work -Biochemistry, Biology)
3. স্যার গ্রেগরি পি.উইন্টার
(UK,Field of
work-Biochemistry)
শান্তি
৫ অক্টোবর তারিখে শান্তিতে
যৌন সহিংসতা,
যুদ্ধ এবং সশস্ত্র সংঘাত বন্ধের প্রচেষ্টা করার জন্য দুইজনকে নোবেল
দেওয়া হয়। তারা হলেন
1. ডেনিস মুখেজ (Belgian Colony,DRC-Democratic Republic of
the Congo)
2. নাদিয়া মুরাদ (IRAQ)
সাহিত্য
সুইডিশ একাডেমির সদস্যদের
যৌন কেলেঙ্কারি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার কারণে এবছর সাহিত্যে কাউকে
পুরস্কার দেয়া হয়নি।
নোবেল প্রাইজের দাম কত?
বিশ্বের সবচেয়ে
মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার নোবেল প্রাইজ। আলফ্রেড নোবেলের নাম অনুসারে মানবসেবায়
অবদানের জন্য ৬টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেয়া হয়। তবে এই পুরস্কারের বাজারমূল্য
কত সেটা জানা আসলে খুব কঠিন নয়।
কারণ গত ১১৪ বছরের ইতিহাসে প্রায় ডজন
খানেক নোবেল পুরস্কার নিলামে তোলা হয়েছে। আর কেনার জন্য তো আর মানবসেবায় তাদের অনন্য
দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হয় না। তাই স্বর্ণে মোড়ানো এই মেডেল ও সার্টিফিকেট কেনার
জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন অনেক ধনকুবের।
কিন্তু নিলামে ওঠা এই
নোবেল প্রাইজের দাম যে কাউকে অবাক করবে। কারণ এই পুরস্কারকে যতটা অমূল্য মনে করা হয় এর বাজারমুল্যে
তার প্রতিফলন কমই।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম
দামে বিক্রি হওয়া পুরস্কারটি ফ্রান্সের আরিসটিডে ব্রিয়ান্ড এর। ১৯২৬ সালে পাওয়া এই
পুরস্কারটি ২০০৮ সালে মাত্র ১৩ হাজার ৬৫০ ডলারে বিক্রি হয়, বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য
১০ লাখ ৬২ হাজার ৪৫৫ টাকা।
তবে কমমূল্যে নোবেল
প্রাইজের ইতিহাস তখনই শেষ। এরপর সবসময়ই আকাশছোঁয়া থেকেছে এর মূল্য। ২০১৪ সালে
অন্তত ৮টি নোবেল প্রাইজ নিলামে তোলা হয়।
ক্রিস্টি’র ইন্টারন্যাশনাল বুক এন্ড
ম্যানুস্ক্রিপট বিভাগের প্রধান ফ্রান্সিস ওয়ালগ্রেন বলেন, ‘বিংশ
শতাব্দীতে আবিস্কার ও উন্নয়নে সবারই আগ্রহ আছে। আর এই নোবেল প্রাইজ আসলে সেসব
ক্ষেত্রেই সাফল্যের স্বারক বহন করে। তাই আমরা যেসকল বস্তু নিলামে তুলি সেই তালিকার
উপরেই নোবেল প্রাইজ থাকবে।’
পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং অর্থনীতিতে
প্রাপ্ত নোবেলগুলো ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ ডলার দামে পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে অর্থাৎ তিন
কোটি টাকারও উপরে।
তবে সবচেয়ে চমক জাগাবে
১৯০৯ সালে বেলজিয়ামের অগাস্টা বির্নাটের পাওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কারটি। নিলামে এর
মূল্য নির্ধারণ হয় ৬ লাখ ৬১ হাজার ডলার। আর ১৯৩৬ সালের শান্তি পুরস্কারটি বিক্রি
হয় ১১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে।
তবে সবচেয়ে বেশি দাম উঠেছে
কারিগরী ক্ষেত্রে পাওয়া নোবেল পুরস্কারের। ১৯৬২ সালে ডিএনএ এর গঠন আবিস্কারে নোবেল পান
মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন। জীবদ্দশাতেই নোবেল বিক্রি করা ব্যক্তিদের ছোট
তালিকার মধ্যে তিনি অন্যতম।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি
৪.৭৬ মিলিয়ন ডলারে তার নোবেল পুরস্কারটি বিক্রি করেন বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য ৩৭
কোটি টাকারও বেশি।
ওয়াহলগ্রেন বলেন, ‘ওয়াটসন আসলে অন্যান্য অনেক
নোবেল বিজয়ীর চেয়ে বেশি পরিচিত এবং সে একজন বিতর্কিত তারকার মতো। সে আসলে
বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প।’
তবে মজার বিষয় হলো এত টাকা
দিয়ে কেনা সেই নোবেল প্রাইজটি আবার তাকে ফিরিয়ে দেন এর ক্রেতা। রাশিয়ান সেই
ধণকুবের বলেছিলেন,
তার গবেষণার জন্য উপহারস্বরুপ তাকে এটি ফিরিয়ে দিলেন তিনি।
২০০৭ সালে এক মন্তব্যের
কারণে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন জেমস ওয়াটসন। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আফ্রিকানদের মেধা অনেক কম।
এছাড়া জীবিত ব্যক্তিদের
মধ্যে লিওন লেডারমান তার নোবেল প্রাইজটি বিক্রি করেন ৭ লাখ ৬৫ হাজার ডলারে। ৯৩ বছর
বয়সী এই মার্কিন বিজ্ঞানী ১৯৮৮ সালে পদার্থবিদ্যা বিভাগে নোবেল পুরস্কার পান।
তবে সবসময় এত দামে বিক্রি
করতে পারেন না নোবেল বিজয়ীরা। ১৯৪৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পাওয়া মার্কিন লেখক তার
মেডেলটি বিক্রি করে ৫ লাখ ডলারও পাননি।
এমনিতে মেডেলগুলো তৈরিতে
১৫০ গ্রাম ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়। ১৯৭৯ সালে এটি ২৩ ক্যারেটের ছিলো।
শুধুমাত্র স্বর্ণের হিসেবেই এর বাজারমূল্য হওয়া উচিত কমপক্ষে ৫ হাজার ৫০০ ডলার।
No comments