Breaking News

নয়নতারা গল্প

নয়নতারা

Bengali story
খানিক আগে বৃষ্টি হয়েছে। চকচকে রাস্তায় হ্যালোজেনের হলদে আলো পিছলে যাচ্ছে। এইখানে এসে রাস্তাটা ঢালু হয়ে গড়িয়ে গেছে গঙ্গার দিকে। সাইকেলটা প্যাডেল না করেই ছেড়ে দিল টোটন। বাঁদিকে গঙ্গা। তার আগে শ্মশান। টোটন আড়চোখে তাকাল ডানদিকের হলুদ বাল্বের আলোয় ভরা দোকানগুলোর দিকে। শ্মশানযাত্রীরা এখানে এসে চা-কচুরি খায়। নাহ, কেউ নেই। তার মানে সবাই ভিতরে, চুল্লির কাছে।
আজ দুপুরে সন্তুর বাবা মারা গেছে। খাওয়া দাওয়ার পরে বারান্দায় ঝিমোচ্ছিল। তখনই মাটিতে পড়ে যায়। ডাক্তার এসে ঘাড় নেড়ে বুঝিয়ে দেন, সব শেষ। মাস দুয়েক আগে পেপসির গোডাউনটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সন্তুটা পুরো কাঠ বেকার। বাড়িতেই ছিল। তিনু, পাবেলও খবর পেয়ে চলে গেছিল। টোটনই খালি যেতে পারেনি। অথচ সাইকেলে বড়জোর পনেরো মিনিট লাগত যেতে। কিন্তু ওর তখন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। কাজ বন্ধ হওয়ার পরে বাবার হোটেলেই বসতে হচ্ছে দু’বেলা।
তিনুকে পাঠিয়েছিল সন্তু। শুকনো মুখে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল তিনু, ‘‘ভাই, সন্তুর হাত পুরো ফাঁকা। আমাদের কেসটাও তো জানিস।’’ সরাসরি ওর থেকে টাকা চায়নি। কেবল ম্লান মুখে তাকিয়ে ছিল। ওই কাতর ভঙ্গি দেখেই বুঝে গেছিল টোটন।
সেই সময় বাবা ওখানে ছিল না। চট করে ক্যাশ থেকে পাঁচটা পাঁচশো টাকা বের করে এনে তিনুর পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। তিনু অবশ্য পাঁচ চেয়েছিল। ম্যাটাডোর ভাড়া আছে। শ্মশানযাত্রীও কম হচ্ছে না। শ্মশানে তাদের খাওয়ানোর খরচা আছে। কিন্তু টোটন এর বেশি নিতে সাহস পায়নি। এটুকুও সে কেমন‌ করে পারল ঠিক জানে না। আসলে সন্তুর জন্য এটুকু করতে না পারলে… টোটন তখনই ঠিক করে নিয়েছিল আজ বাড়ি ফিরবে না। বন্ধুদের কারও বাড়িতে থেকে যাবে।
বিকেলে ফাঁকা হয়ে তিনুকে ফোন করেছিল। তিনুই বলল, ‘‘আমরা বেরিয়ে গেছি। তুই আবার সন্তুর বাড়ি চলে যাস না। শ্মশানে চলে আয়।’’ বাবা এতক্ষণে নিশ্চয়ই টের পেয়ে গেছে। কথাটা মনে হতেই টোটন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ধুর! যা হবে দেখা যাবে।
আক্রার এই শ্মশানে বাটানগরের শ্মশানের মতো ভিড় হয় না। ফাঁকাই থাকে। লাইন পড়ে না। টোটন দেখতে পেল চুল্লির ঘরের পাশে বেশ ভিড়। সিঁড়িতেও কয়েকজন দাঁড়িয়ে। একটাও চেনা মুখ নেই। একে তাকে পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এল টোটন। আর তারপর থ হয়ে গেল। চুল্লির সামনে বাঁশের চ্যাটাইতে নামিয়ে রাখা বডিটা সন্তুর বাবার নয়, একটা মেয়ের। বিয়েঅলা মেয়ে। বড়জোর বাইশ-তেইশ। ফরসা মুখ। মাথাভর্তি সিঁদুর। পায়ের পাতায় আলতা।
আস্তে আস্তে নীচে নেমে এল টোটন। আড়ষ্ট আঙুলে টাইপ করল সন্তুর নাম। অনেকক্ষণ ধরে রিং হচ্ছে। কী এক আশঙ্কায় অস্থির হয়ে উঠল টোটন। অবশেষে গলা পাওয়া গেল সন্তুর। নির্লিপ্ত স্বরে বলল, ‘‘বল ভাই।’’
—তোরা কোথায়?
—আমরা… আমরা শ্মশানে তো। আক্রায়। তুই এসেছিস নাকি? এই তো চুল্লির ধারে…
পাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল। টোটন চুপ করে রইল। হঠাৎ তিনুর গলা পাওয়া গেল, ‘‘সন্তুর বাবা পুড়ছে। পুড়ছে আর আমরা জল দিচ্ছি। আমাদের গলায়।’’
এবার হাসির ছররা। আরও কিছু হয়তো বলত তিনু। কিন্তু টোটন ফোনটা কেটে দিল। কাটার আগে কানে এল কেউ সজোরে সিটি মারল। কেউ কি ‘‘লুঃ লুঃ’’ বলে নেশার ঘোরে চেঁচাল?
তার মানে সন্তুর বাবা মারা যায়নি! পুরোটাই ওকে মুরগি করার জন্য? পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে… ওরা এটা… এটা করতে পারল! এর আগেও বাবার থেকে ঝেড়ে ওদের মদ খাইয়েছে টোটন। ফালতু এমন ঢপ দিয়ে, এভাবে… টোটনের মাথার মধ্যে সব গুলিয়ে যাচ্ছিল। একবার মনে হয়েছিল বটে, সন্তুর কোনও আত্মীয়-টাত্মীয় নেই যে টাকা দিতে পারে! তার কাছেই কেন… কিন্তু কথাটাকে মনের ভিতরে জমতে দেয়নি টোটন। হাজার হোক, ওরা মিথ্যে বলবে এটা ভাবাই যায় না।
মিনিট দুয়েকের মধ্যেই টোটন টের পেল সে কাঁদছে। খুব বেশি নয়। কেবল দু’ফোঁটা জল চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। কতদিন পরে তার চোখে জল এল, একথা তার মনেও পড়ল না। বাবা ক’দিন আগেই বলছিল, ‘‘খুব বন্ধু বন্ধু করছিস তো। এখন বয়স কম, বুঝবি না। জেনে রাখিস সব হিংসেয় জ্বলছে। তুই তো আর ওদের মতো বেকার হয়ে যাসনি। পারলে সামলে চল।’’
নিজের নির্জন কান্না উল্টো হাতে মুছে ফেলতে গিয়ে টোটন চমকে উঠল। উপরে সিঁড়ির কাছে দাঁড়ানো একটা ছেলে ওকে দেখছে হাঁ করে। মনে হয় ওরই বয়সি। কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। টোটন ভাবল, অবাক হওয়ার কী হল? শ্মশানে কাঁদার কি কোনও বয়স আছে?
গঙ্গার পাড়ে এসে বসে পকেট হাতড়ে একটা বিড়ি ধরাল টোটন। আজ বোধহয় পূর্ণিমা।
আকাশে মেঘ আছে। একটা গোলগাল চাঁদ তার ফাঁক দিয়েই বেরিয়ে এসে জ্বলে আছে আকাশে। হ্যালোজেনের আলোর সঙ্গে চাঁদের আলো মিশে জায়গাটা কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে। এই গঙ্গাপাড়েই বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড় করেছে ক’দিন আগে। আজ টোটন একলা।
বডি বোধহয় চুল্লিতে দিয়ে দিয়েছে। শ্মশানযাত্রীরা ভিড় জমিয়েছে আশপাশে। আর বড়জোর পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। তার মধ্যেই… বিড়িটা জিভে জড়িয়ে তিতকুটে। টোকায় উড়িয়ে দিয়ে টোটন চোখ বন্ধ করল। সেই কবে মা’কে নিয়ে এই শ্মশানেই…
মায়ের মাথা ভর্তি সিঁদুর। চারপাশে লোকের ভিড়। বাবাকে ধরে ধরে নিয়ে আসছে পাড়ার কাকুরা। হাতের শাঁখা এবার খুলে নেওয়া হবে। বাবা জলভরা চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। ভাবতে ভাবতেই টোটনের চোখের উপরে ভেসে উঠল একটু আগে দেখা অল্পবয়সি বউটার মুখ। তারও কপাল ভরে আছে সিঁদুরে। লাল টকটকে সিঁদুর।
—আপনি তো পিকুদা?
চটকা ভেঙে তাকাল টোটন। সেই ছেলেটা। দূর থেকেই টোটনের মনে হল ছেলেটা অনেকক্ষণ জল খায়নি। ঠোঁটটা শুকিয়ে কড়কড়ে হয়ে আছে। দু’চোখ কেমন ঘোলাটে।
টোটন মাথা নাড়ল। কথা বলতেও ইচ্ছে করছে না এখন। কিন্তু ছেলেটা মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়। ওর গা ঘেঁষে উবু হয়ে বসল। তারপর যেন নিজের মনে বলছে, এভাবেই বলল, ‘‘নয়নতারার কাছে শুনেছি। আপনাদের বসিরহাটে অনেক ফাঁকা জায়গা, না? ইচ্ছেমতো পালিয়ে যাওয়া… আমি সব জানি। জানতাম খবরটা ঠিকই পেয়ে যাবেন। এতদিনের চেনা, একবার আসবেনই। ও কিন্তু বহুবার ভেবেছে আপনি আসবেন। আসতে পারতেন। আমি কিছু মনে করতাম না। এলেন সেই, কিন্তু দেরি করে।’’
কী বলে যাচ্ছে ছেলেটা? মনে হচ্ছে এই পিকুদা ওর বউয়ের লাভার ছিল। অন্য সময় হলে হেসে ফেলত টোটন। এখন হাসল না। জিজ্ঞেস করল, ‘‘কী হয়েছিল?’’
ছেলেটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ‘‘কেন আপনি জানতেন না? এ অসুখ কি আজকের? সেই ছোটবেলা থেকে লিভারটা দিনে দিনে… এ অসুখে ভালো হয়, বলুন দাদা?’’
টোটন কী বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। ছেলেটা অবশ্য নিজের মনেই আরও কী সব বলে যাচ্ছে। তবে এখন কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে না ভালো করে। তবে যেটুকু শোনা যাচ্ছে তাতে মনে হল আগের কথাগুলোই রিপিট করছে। তারপর হঠাৎ থেমে গিয়ে পরিষ্কার স্বরে বলল, ‘‘আমরা খুব ভালো ছিলাম, জানেন? ও আপনার কথা বলত মাঝেমধ্যে। কিন্তু আমাকে খুবই…’’
—এই সনৎদা, কী হচ্ছে? একা একা এখানে… চলো, চলো ওইদিকে…
লম্বা রোগামতো একটা ছেলে এসে তাড়া লাগাল। ছেলেটা টোটনের দিকে দেখছিল। ইশারায় বোঝাল, মাথাটা গেছে। তারপর ধরে ধরে নিয়ে গেল দূরে বাঁধানো সিমেন্টের চাতালের দিকে। টোটন দেখল নয়নতারার বর হাঁটতে পারছে না। বারবার ঝুঁকে পড়ছে। বোধহয় নেশাও করেছে। যদিও মুখে গন্ধ নেই। কোনও শুকনো নেশা করেছে হয়তো।
টোটন সেদিকে দেখতে দেখতে আর একটা বিড়ি ধরাল। কোনও নেশা নাও হতে পারে। হয়তো শোকে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। লোকে এরকম ঘটনায় পাগল হয়ে যায়, জানে টোটন। না হলে তার মতো পাবলিককে কেউ বউয়ের লাভার ভেবে ভুল করে? আসলে ওর চোখে জল দেখেই…
বউটার মুখটা সে বলতে গেলে এক ঝলক দেখেছে। কিন্তু তাতেই মনে গেঁথে গেছে। বিরাট কিছু সুন্দরী নয়। কিন্তু সারা মুখে অদ্ভুত একটা মায়া। সেই মুখটা এখন আর নেই। আগুনের ভিতরে ঝলসে পুড়ে এখন সব গলে যাচ্ছে। টোটন নিজের মনে বিড়বিড় করল, ‘‘নয়নতারা।’’ নামটা বেশ ভালো লেগেছে তার।
ফোনটা বেজে উঠেছে। টোটনের বুকের মধ্যে কেউ হাতুড়ি পিটতে শুরু করল। বাবার ফোন। তার মানে সব জেনে গেছে। টোটন কলটা কেটে দিল। ভাবল এখনই উঠে গিয়ে ওদের খুঁজে বের করে। সন্তুর মুখটা মনে পড়ল। আর গলার আওয়াজটা। ক’দিন ধরেই ওকে ‘আম্বানির বাচ্চা’ বলা শুরু করেছিল। সেভাবে পাত্তা দেয়নি টোটন। হাজার হোক এত দিনের সম্পর্ক। চার বছরেরও বেশি হয়ে গেল। পেপসির গোডাউনে লোডিং আনলোডিংয়ের কাজ। ইচ্ছে করে এক শিফট নেওয়া। পাড়ার ছেলেদের ছেড়ে কোন দূরের রায়পাড়ার সন্তু, পাবেল, তিনুদের সঙ্গেই কেটে যেত দিনরাত। ডিউটি। ডিউটির ফাঁকেই তাস। নেশা। ফুর্তি। টোটন কোনওদিন ভাবতেও পারেনি, দূরের পাড়া হওয়ারই সুবিধা নেবে ওরা। কাছাকাছি হলে এমন কাঁচা ঢপ মারার সাহস পেত না। সন্তুটা এত নীচে নেমে গেল‌! নিজের বাবাকে নিয়ে… ছিঃ! টোটনের ঘেন্না হচ্ছিল।
বাবা আবার ফোন করছে। রগটা কেমন অশান্ত হয়ে উঠতে থাকে টোটনের। একবার ভাবে ফোনটা ধরে বলে, ‘‘হ্যাঁ, আমি নিয়েছি টাকাটা। সারাদিন খাটি, মাইনে দাও? ওই যা দু’-চার টাকা ঠেকাও, লোককে বলা যায়?’’ মনে মনে বাবার উত্তরটাও শুনতে পায়, ‘‘তোর বাবার কি গ্র্যান্ড হোটেল? দু’আনার পাইস হোটেল। মিস্তিরিরা সস্তায় ডিম-ভাত, ডাল-ভাত খেতে আসে। সংসার কী ভাবে চলে… অতগুলো টাকা তুই নিয়ে নিলি?’’
ফোনটা বেজে বেজে থেমে যায়। ফোনটা সুইচ অফ করে পকেটে ঢুকিয়ে দিল টোটন। ব্যাস! তাকে আর কেউ পাবে না। না বাবা, না সন্তুরা। যেন ফোনটা নয়, এই আঠাশ বছরের জীবনটারই শাটার নামিয়ে দিল সে। খুব মদ খেতে ইচ্ছে করছে।
—চলো চলো। ও সনৎদা! ডাকছে।
দাহ হয়ে গেছে। নয়নতারার বর চিৎকার করে কেঁদে উঠল। সেই চিৎকার দূরের জেটিতে ধাক্কা খেয়ে গঙ্গার ওপরে বইতে থাকা হাওয়া বেয়ে আরও দূরে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। আশপাশে ছড়িয়ে থাকা দলটা আবার চুল্লির দিকে হেঁটে গেল। এবার ডোম এক ট্রে ভর্তি ছাই খুঁজে বের করে আনবে নাভি। খানিকক্ষণের মধ্যেই সেই নাভি গঙ্গার শরীরে নিজেকে মিশিয়ে দেবে।
চাঁদ গড়িয়ে গেছে মেঘের আড়ালে। কতবার এখানে মড়া নিয়ে এসেছে টোটন। কিন্তু আজ যেন জায়গাটাই অচেনা মনে হচ্ছে। সবাই চলে গেলেও সেই রোগাটে লম্বা ছেলেটা রয়ে গেছে। সঙ্গে আরেকটা ছেলে। সে বলল, ‘‘আমার এসব ভালো লাগে না ভাই। নিতে পারি না। সনৎদাটার জন্য হেবি খারাপ লাগছে। পুরো গেছে। কী সব বলছে শুনেছিস? বউদির নাকি কে লাভার ছিল, সেও নাকি এসেছে শ্মশানে!’’
টোটনের মনে হল সঙ্গের ছেলেটা তার দিকেই যেন ইশারা করে দেখাচ্ছে। বোধহয় তখন ওদের কথা শুনতে পেয়েছিল। অন্য ছেলেটা হেসে উঠল, ‘‘ধুস! হতেই পারে না। দেখলেই বোঝা যায় লাথখোর! নে একটা বিড়ি খাওয়া।’’
নেশা করেনি একফোঁটাও। তবু যেন কেমন ঝিম ধরে যাচ্ছে টোটনের। তাকে দেখলেই কি লাথখোর মনে হয়?
গঙ্গাপাড় এখন শান্ত। শ্মশানযাত্রীরা একটু আগে বেরিয়ে গেছে। টোটন একঠায় বসে আছে।
‘‘লাথখোর’’। নিজের মনে উচ্চারণ করল সে। এযাবৎ কত মেয়েকে দেখে কত কথাই মনে হয়েছে। দু’-একটা ক্ষেত্রে বলতেও গেছে। ফালতু অপমানিত হতে হয়েছে। লাথি খেতে খেতে অভ্যেস হয়ে গেছে। এবার বন্ধুরাও লাথি মেরে দিল। সটান পাঁজরে। বুকের মধ্যে তেষ্টা পাকিয়ে উঠছে। এখন কেউ একটা বোতল দিলে সে র-ই মেরে দিত। কিন্তু কোথায় পাবে? একটা ঠেক আছে। তবে দূরে। সেখানে ব্ল্যাকে কিনতে হয়। পকেট খাঁ খাঁ। তাই ওসব ভেবে লাভ নেই।
সামনে গঙ্গা। নেশার মতো বয়ে যাচ্ছে জল। এই জলে একটু আগে মিশে গেছে এক তরুণীর নাভি। টোটন খানিক ঝুঁকে পড়ল। অন্ধকার নদীর বুকে চাঁদের আলোয় সে যেন কিছু খুঁজছিল।
লাথখোর হতে পারে। তবু এই টোটনই সনতের কাছে তার বউয়ের লাভার! টোটনের ভয় ছিল যাওয়ার আগে না আবার কথা বলতে আসে! আসেনি। কেবল দূর থেকেই জোর করে সে তার হাতে গুঁজে দিয়ে গেছে একটা সম্পর্ক। বন্ধু-স্বজনহীন টোটনের ফাঁকা হাতে কেবল সেইটুকুই রয়ে গেছে।
‘‘নয়নতারা!’’ অন্ধকার জলের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে বলল টোটন যেন সে কোনও মন্ত্র উচ্চারণ করছে। নামটা তার ভালো লেগেছে।

No comments