Breaking News

মিশরের রানি 'ক্লিওপেট্রা'

মিশরের রানি 'ক্লিওপেট্রা' এক কিংবদন্তীর নাম। তিনি সত্যিই কেমন ছিলেন, কেন এত বিখ্যাত, কেনই বা তাকে নিয়ে এত জল্পনা-কল্পনা তা বুঝি নিশ্চিত করে আজ আর জানার উপায় নেই। ইতিহাসবিদরা তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নরকম কথা বলেছেন, আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে তাকে নিয়ে যুগ যুগ ধরে সৃষ্টি হয়েছে নানা গল্প, উপকথা, শ্রুতিকথা। হলিউডে তাকে নিয়ে কম করে হলেও ডজনখানেক সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য বই। যার মধ্যে জীবনী, ইতিহাস, কাল্পনিক কাহিনী, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী কোনওটাই বাদ পড়েনি।
Image result for ক্লিওপেট্রা

অনেকের মতে, ক্লিওপেট্রা ছিলেন অসাধারণ সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি, আবার কেউ কেউ বলেন ক্লিওপেট্রা এমন কিছু রুপবতী ছিলেন না। তিনি বিখ্যাত ছিলেন তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আর ক্ষমতার কারণে। ইতিহাসে ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে যত মাতামাতি আর আলোচনা হয়েছে, তার সমসাময়িক আর কোনও মহিলাকে নিয়ে এর শতভাগের একভাগ আলোচনাও বুঝি হয়নি। ইতিহাসের এই মহীয়সী নারী ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে রয়েছে অনেক জানা-অজানা কথা, এরই কিছু নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
ইতিহাসে মিশরের রানি বলে পরিচিত ক্লিওপেট্রা। অথচ মজার ব্যাপার কি জানেন? তিনি কিন্তু জন্মসূত্রে মিশরীয় ছিলেন না।
প্রাচীন গ্রীস বা মেসিডোনিয়ার রাজা মহান আলেকজান্ডারের সেনাপতি ছিলেন টলেমি। খ্রিষ্টপূর্ব 323 সালে আলেক্সান্ডার মারা গেলে তার অন্যতম সেনাপতি টলেমি মিশরে এসে স্বাধীন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই টলেমি রাজবংশেরই উত্তরসূরী ছিলেন ক্লিওপেট্রা। তিনি ছিলেন দ্বাদশ টলেমির কন্যা, ইতিহাসে তার মায়ের পরিচয় অবশ্য নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। টলেমি রাজবংশের শেষ শাসক ছিলেন ক্লিওপেট্রা। তার মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই মিশরে 300 বছরের মেসিডোনিয়ান শাসনের পতন ঘটে।
নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে বা যৌন সম্পর্ক প্রাচীনকালে খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। ইউরোপে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসেও এমন বহু উদাহরণ আছে যেখানে নিকটাত্মীয়দের মধ্যে, বিশেষত, ভাইবোনের মধ্যে বিয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু মিশরীয় সভ্যতায় এমন উদাহরণ ছিল খুব বেশি। মিশরীয় লোককথায়, দেবতা ওরিসিস তার বোন আইসিসকে বিয়ে করেছিল রাজকীয় রক্তের শুদ্ধতা রক্ষার অভিপ্রায়ে।
মিশরীয় শাসক, যাদের বলা হত ফারাও, তারা তাদের এইসব দেবতাকেই আদর্শ মানতো। দেবতাদের অনুকরণে তাদের মধ্যেও রক্তের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে-শাদির চল ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ক্লিওপেট্রারও বিয়ে হয়েছিল তার নিজের ছোট দুই ভাইয়ের সাথে। ক্লিওপেট্রার বাবা ছিলেন রাজা দ্বাদশ টলেমি, মা কে ছিলেন সে সম্পর্কে জানা যায় না। তবে অনেক ইতিহাসবিদের ধারণা, ক্লিওপেট্রার মা আর বাবাও ছিলেন নিজের দুই ভাই-বোন।

যুগ যুগ ধরে ক্লিওপেট্রাকে সুন্দরের প্রতিমূর্তি হিসেবে কল্পনা করা হয়। কিন্তু ক্লিওপেট্রা কি সত্যিই ততটা সুন্দরী ছিলেন যতটা কল্পনা করা হয়?
2007 সালে মাটি খুঁড়ে ক্লিওপেট্রার আমলের একটি মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়। মুদ্রাটিতে ক্লিওপেট্রার একটি প্রতিকৃতি আঁকা ছিল, যেটা থেকে দেখা যায় ক্লিওপেট্রা সাদামাটা মহিলাদের মতই ছিলেন দেখতে। সাধারণ সুন্দরী মহিলাদের মতো সুন্দরীও তিনি ছিলেন না সম্ভবত। মুদ্রার প্রতিকৃতিতে দেখা যায় তিনি ছিলেন খানিকটা পুরুষালী আর কঠিন চেহারার এক মহিলা। বিভিন্ন সিনেমা-গল্পে তার যে অসাধারণ রুপলাবণ্যের বর্ণনা দেওয়া হয় তা আসলে কল্পনাপ্রসূত।
অবশ্য ক্লিওপেট্রার রুপের ঘাটতি ইতিহাসবিদদের জন্য তেমন কোনও বড় ব্যাপার ছিল না। ক্লিওপেট্রার শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে সন্দেহ থাকলেও তার ব্যক্তিত্ব নিয়ে কোনও ইতিহাসবিদের মধ্যে সন্দেহের কোনও অবকাশ ছিল না কখনওই। রানি ক্লিওপেট্রার ব্যক্তিত্ব এবং অভিজাত্য ছিল মন্ত্রমুগ্ধকর।
প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায়, ক্লিওপেট্রা কেবল বিচক্ষণ কূটনীতিক ই ছিলেন না। তিনি ছিলেন গণিত, চিকিত্‍সা, অ্যালকেমি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, এবং অন্য সব বিষয়ের একজন মনোযোগী শিক্ষার্থী। অর্থাত্‍ সকল বিষয়েই তিনি জ্ঞান রাখতেন। ক্লিওপেট্রা কম করে হলেও নয়টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারতেন।
গ্রীক বাদে আর কোনও ভাষা টলেমি সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতো কিনা তা বলা কঠিন। কিন্তু টলেমি সাম্রাজ্যের রানি ক্লিওপেট্রা তার শাসিত প্রায় সকল রাজ্যের ভাষা জানতেন। তিনি আরব, ইহুদি, পার্থিয়ান, সিরিয়ান, ইথিওপিয়ান, মেদেস, ট্রগোড্রাইটি.এমন অনেক ভাষায় পারদর্শী ছিল। তিনি ছিলেন টলেমি সাম্রাজ্যের একমাত্র শাসক, যিনি মিশরীয়দের নিজস্ব ভাষা শিখেছিলেন। তার আগে টলেমী সম্রাজ্যের কোন শাসকই মিশরীয়দের ভাষা, সংস্কৃতি বা ধর্মের প্রতি কোন আগ্রহ দেখায় নি। সেসময় টলেমিদের গ্রিক ভাষাই মিশরের অফিসিয়াল এবং বাণিজ্যিক ভাষায় পরিণত হয়। মিশরীয়দের নিজস্ব ভাষার পাশাপাশি ক্লিওপেট্রা হায়ারেগ্লিফিকও পড়তে শিখেছিলেন।
ক্লিওপেট্রা নিজেকে একজন মিশরীয় বলে পরিচয় দিতেন। মিশরের ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরতেন। মিশরীয়দের ঐতিহ্যবাহী উত্‍সব অনুষ্ঠানগুলোতেও হাজির থাকতেন তিনি। এভাবেই মেসিডোনিয়ান টলেমি বংশের উত্তরসূরী ক্লিওপেট্রা হয়ে উঠেছিলেন মিশরীয়দের রানি। মিশরীয়রা তাকে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক বলে বিশ্বাস করত। বিচক্ষণ ক্লিওপেট্রা বুঝেছিলেন তিনি যাদের শাসক, তাদেরকে ঠিকমতো বুঝতে ও জানতে হবে, না হলে তিনি তাদের ওপর রাজ করতে পারবেন না। ক্লিওপেট্রার মত এমন প্রজ্ঞা আজকের আধুনিক দুনিয়ার অনেক শাসকের মধ্যেও থাকে না।
নিজের তিন সহোদরকে খুন করেছিলেন ক্লিওপেট্রা।

মিশরীয় সাম্রাজ্যের রীতি ছিল, কোনও একজন নয় একই সময়ে একসাথে দু'জন শাসককে জোট বেধে রাজ্য শাসন করতে হতো। একই সময়ে দু'জন ফারাও সাম্রাজ্য শাসন করতো। একজন প্রধান শাসকের সাথে একজন সহ-শাসক থাকাটা বাধ্যতামূলক ছিল। সেই সহ-শাসককে হতে হতো আবার বিপরীত লিঙ্গের। 51 খিস্ট পূর্বাব্দে পিতার মৃত্যুর পূর্বে কিছুদিন ক্লিওপেট্রা, তার পিতা দ্বাদশ টলেমির সাথে মিলে সহ-শাসক হিসেবে সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন। কিন্তু, দ্বাদশ টলেমি মারা যাবার সময় হুকুম জারি করে গিয়েছিলেন, ক্লিওপেট্রাকে তার 11 বছর বয়সী ছোটভাই টলেমি ত্রোয়োদশকে বিয়ে করতে হবে। যাতে তারা দু'জন মিলে সাম্রাজ্য শাসন করতে পারে। ভাইয়ের সাথে ক্লিওপেট্রার বিয়েটা ছিল কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতা। ভাই টলেমি ত্রয়োদশ এবং ক্লিওপেট্রার মধ্যে কোনও বনিবনা ছিল না শুরু থেকেই। তাই, অচিরেই টলেমি ত্রয়োদশ ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ক্লিওপেট্রাকে হটিয়ে সিংহাসনে নিজের একচ্ছত্র অধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে ওঠে, একই সঙ্গে ক্লিওপেট্রার ভাই ও স্বামী ত্রয়োদশ টলেমি।

ক্লিওপেট্র্রা সেসময় ত্রয়োদশ টলেমিকে প্রতিহত করতে রোমান সেনাপতি এবং তার প্রেমিক জুলিয়াস সিজারের শরণাপন্ন হন। জুলিয়াস সিজার টলেমিকে ক্লিওটেপট্রার সাথে মিলে রাজ্য শাসন করতে বললে, টলেমি তাতে আপত্তি জানায়। ফলে, জুলিয়াস সিজারের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ত্রয়োদশ টলেমি। শেষপর্যন্ত, নীল নদের যুদ্ধে জুলিয়াস সিজারের কাছে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে, নীল নদের জলে ডুবে মারা যায় ত্রয়োদশ টলেমি।
ত্রয়োদশ টলেমির মৃত্যুর পর নিয়ম মেনে, একজন সহ-শাসক পাবার জন্য, আরেক ছোট ভাই চতুর্দশ টলেমিকে বিয়ে করেন ক্লিওপেট্রা। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর তাকেও বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন তিনি। ক্লিওপেট্রার এক ছোট বোন ছিল, আরসিনো। বিদ্রোহের সময় ভাইদের পক্ষ নেওয়ায় তাকেও হত্যার আদেশ দেন ক্লিওপেট্রা।

পরিবারে প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ না থাকলে, নিজেকে মিশরের রানি বলে ঘোষণা করেন ক্লিওপেট্রা। মিশরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় রানি ক্লিওপেট্রার শাসনামল।
মিশরকে রোমানদের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে রোমান শাসকদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করেন চতুর ক্লিওপেট্রা। রোমান সেনাপতি ও একনায়ক জুলিয়াস সিজার ও মার্ক অ্যান্টনি দু'জনের সাথেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ক্লিওপেট্রার। এই প্রেম আর পরিণয় নিয়ে অনেক ধরণের গল্প-কথা প্রচলিত রয়েছে ইতিহাস আর মানুষের কল্পনায়।

ক্লিওপেট্রার দু'জন প্রেমিকই ছিলেন রোমান সেনাপতি, দুজনই ছিলেন বিবাহিত এবং দুজনই ক্লিওপেট্রার প্রেমে পাগল ছিলেন। শোনা যায়, ক্লিওপেট্রার প্রেমে পাগল জুলিয়াস সিজার রোমের ভেনাসের মন্দিরের সদর দরজায় দুজনের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন- দেবতা রুপী জুলিয়াস সিজার এবং দেবী রুপী ক্লিওপেট্রার। মার্ক অ্যান্টোনিও তো ছিলেন পাগলামিতে আরও এক ধাপ উপরে। তিনি আস্ত একটা যুদ্ধের অভিযানই বাতিল করেছিলেন ক্লিওপেট্রার সাথে সময় কাটাবার অভিপ্রায়ে।
অনেক বিষয়ের মত রসায়ন শাস্ত্রেও খানিকটা পারদর্শিতা ছিল ক্লিওপেট্রার। তিনি বিশ্বাস করতেন, সুগন্ধি শুধু রুপচর্চার উপাদান হিসেবেই নয়, অন্যকে প্ররোচিত করার উপাদান হিসেবেও খুব কাজের। কথিত আছে, রোমান সেনাপতি মার্ক অ্যান্টোনির সাথে প্রথম দেখা করতে যাবার আগে তিনি তার জাহাজের পাল সুগন্ধি দিয়ে ভিজিয়েছিলেন, যাতে অ্যান্টোনি তাকে চোখে দেখবার পূর্বেই তার সুগন্ধে অভিভূত হয়ে পড়ে। ক্লিওপেট্রার নিজের একটা সুগন্ধি ফ্যাক্টরি ছিল, যেখানে তিনি নিজেই তৈরি করতেন বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি।

কোনও মানুষই বৃদ্ধ হতে চায় না, সবাই ই চায় বয়স ধরে রাখতে। কিন্ত বয়স ধরে রাখা ব্যাপারটা কিন্ত কঠিন এবং অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। তবু নারীরা বয়স ধরে রাখতে নানা রকম রুপচর্চার আশ্রয় নেয়। তো, ক্লিওপেট্রা, যে ছিল মিশরের রানি, চরম প্রতিপত্তি আর ক্ষমতার অধিকারী, সে কি করত নিজের বয়স আর রুপ ধরে রাখতে?
অন্য সাজগোজ আর অলঙ্কারের কথা যদি বাদও দেওয়া হয়, ক্লিওপেট্রার স্পা করার জন্য সে যুগে প্রতিদিন যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হতো, তা নাকি এ যুগের বিলিয়নিয়ারদের পক্ষেও প্রতিদিন খরচ করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র এই মহিলার গোসলের জন্যই নাকি দরকার হতো, 700 গাধার দুধ। এই পরিমাণ গাধা আর তার দুধ সংগ্রহ করার জন্য কত লোকের প্রয়োজন হত তা কি আর বলার দরকার আছে? অবশ্য এই আইডিয়াটা যে ক্লিওপেট্রার নিজের উদ্ভাবিত ছিল তা কিন্তু নয়। সেসময়ে মিশরে গাধার দুধ নারীদের রুপচর্চার খুব জনপ্রিয় উপাদান ছিল।

ক্লিওপেট্রা তার প্রজাদের প্রায় বিশ্বাস করিয়ে ফেলেছিলেন যে, তিনি দেবী আইসিসের পূণর্জন্ম
প্রাচীনকালের বেশিরভাগ শাসকরাই নিজেদের দেবতুল্য মনে করত, ক্লিওপেট্রাও ব্যতীক্রম ছিলেন না। তিনি প্রজাদের মধ্যে অনুগত্য স্থাপন করার জন্য, তাদের মধ্যে প্রচার করতেন, তিনি দেবী আইসিসের পূণর্জন্ম। এবং তিনি একাজে প্রায় সফল হয়েছিলেন। মিশরীয়রা অনেকেই তাকে দেবী আইসিসের পূণর্জন্ম বলে সেসময় বিশ্বাস করত।

ক্লিওপেট্রা নিজেকে 'নতুন আইসিস' বলে দাবী করতেন। তিনি বলতেন, পৃথিবীতে দেবী আইসিসের পূণর্জন্মরুপে তার আবির্ভাব ঘটেছে। পুরাণে, আইসিস তার ভাই ওসিরিস কে বিয়ে করেছিল এমনটা বলা আছে। একারণে, শুধু যে ক্লিওপেট্রা দেবী আইসিস এর নাম নিয়েছিলেন তা ই নয়, তার প্রেমিক মার্ক অ্যান্টোনি ও নিজেকে দেবতা ওরিসিস এর পূনঃআবির্ভাব বলে দাবি করত।
ক্লিওপেট্রা নিজেও যে নিজেকে আইসিস বলে বিশ্বাস করতেন, তা কিন্তু নয়। তার যখন যে দেবীর মূর্তি মনে ধরত, তিনি নিজেকে তেমন করে সাজাতে চাইতেন। যেমন, সুগন্ধিযুক্ত রণতরীতে করে তিনি যখন প্রথম মার্ক অ্যান্টেনি'র সাথে সাক্ষাত্‍ করতে যায়, তখন তিনি গ্রীক দেবী ভেনাসের পোশাকে নিজেকে সাজিয়েছিলেন। এত আয়োজনের পরেও কি মার্ক অ্যান্টোনি'র ক্লিওপেট্রার প্রেমে পাগল না হয়ে উপায় ছিল!
ক্লিওপেট্রা ছিল মিশরের শেষ ফারাও।
নিজের ভাইবোনদের হত্যা করেছিল এ অপরাধ যদি বাদ দেওয়া যায়, মিশরের শাসক হিসেবে ক্লিওপেট্রা খুব একটা খারাপ ছিল না। তিনি মিশরকে একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। দুঃখের ব্যাপার হলো' ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর সাথে সাথেই, তার স্বাধীন মিশরের স্বপ্নেরও মৃত্যু ঘটে। 30 খিস্ট পূর্বাব্দে রোমান শাসক অক্টাভিয়ানের (জুলিয়াস সিজারের পোষ্য পুত্র) কাছে তার সৈন্যবাহিনী পরাজিত হলে, ক্লিওপেট্রা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর পর, রোমান শাসক অক্টাভিয়ান মিশরের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেন এবং মিশরকে রোমের একটি প্রদেশে পরিণত করেন। এরইসাথে সমাপ্তি ঘটে মিশরীয় ফারাওদের হাজার হাজার বছরের শাসনের।
ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর পরে অনেক বছর, তার যত গুণাবলী আর বিচক্ষণতা ছিল সেসবের কথা শুধু মিশরীয়রাই মনে রেখেছিল। রোমানরা তার সম্পর্কে নানা ধরণের কুত্‍সা রটিয়েছিল। তারা তাকে একটা নষ্ট আর ডাইনি নারীর খেতাব এনে দিয়েছিল, যে নারী ক্ষমতাশালী পুরুষদের নিজের জাদুর মায়াজালে বন্দি করত এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করত নিজের সুরক্ষার জন্য। ক্লিওপেট্রার পতনের কয়েকশ বছর পরেও রোমান কবিরা তাকে 'মিশরের লজ্জা' বা 'রোমের অভিশাপ' বলে অভিহিত করত।
ক্লিওপেট্রার মৃত্যু সম্ভবত সাপের কামড়ে হয়নি।
ক্লিওপেট্রার জীবন নিয়ে যেমন নানা ধরণের কিংবদন্তীর প্রচলন রয়েছে, তেমনি তার মৃত্যু নিয়েও রয়েছে নানা ধরণের কিংবদন্তী। কথিত আছে, ক্লিওপেট্রা যখন তার সৈন্যবাহিনী অক্টাভিয়ানের কাছে পরাজিত হয়েছে বলে খবর পায়, তখন শান্তভাবে একটি সুইসাইট নোট লিখে, সে নোটটি তার একটা রক্ষীর হাতে দেয়। তারপর, একটি বিষাক্ত সাপের ছোবল বুকে নিয়ে মৃত্যুবরণ করে রানি ক্লিওপেট্রা।
অনেক ঐতিহাসিকই ক্লিওপেট্রার এই অতি নাটকীয় মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেন নি। অনেকের মতে, ক্লিওপেট্রা আত্মহত্যা করেছে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ না থাকলেও, আত্মহত্যার পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ আছে। মিশরীয় যেই সাপের কামড়ে ক্লিওপেট্রার মৃত্যু হয়েছে বলে কথিত আছে, সেই সাপের বিষে তাত্‍ক্ষণিকভাবে মৃত্যু হয় না। বেশ কয়েক ঘন্টা সময় লাগে। অথচ ইতিহাসে অনেকের দাবি, সাপের কামড়ে তত্‍ক্ষণাত্‍ ক্লিওপেট্রার মৃত্যু হয়েছিল। এই বিশ্লেষণ ছাড়াও ক্লিওপেট্রার মৃত্যু যে সাপের কামড়ে হয়নি, এর পক্ষে ঐতিহাসিকদের নানা রকম যুক্তি রয়েছে।

No comments