Breaking News

বায়ুমন্ডলের স্তর কয়টি ও কি কি? বায়ুমন্ডলের স্তরবিন্যাস ও বৈশিষ্ট

 বায়ুমন্ডলের স্তর পাঁচটি। যথা- ট্রপোমন্ডল, স্ট্রাটোমন্ডল, মেসোমন্ডল, তাপমন্ডল ও এক্সোমন্ডল। বায়ুমন্ডল যে সমস্ত উপাদানে গঠিত তাদের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও উষ্ণতার পার্থক্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়। উল্লেখিত স্তরগুলোর প্রথম তিনটি সমমন্ডল (Homosphere)  এবং পরবর্তী দুটি বিষমমন্ডল (Hetrosphere)- এর অন্তর্ভুক্ত।




বায়ুমন্ডলের স্তরবিন্যাস ও বৈশিষ্ট

ট্রপোমন্ডল (Troposphere)

বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তরের নাম ট্রপোমন্ডল। এই স্তরটি ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে লেগে আছে। মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়, তুষারপাত, শিশির, কুয়াশা সবকিছুই এই স্তরে সৃষ্টি হয়। ট্রপোমন্ডলের শেষ প্রান্তের অংশের নাম ট্রপোপজ (Tropopause)। এই স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় ১৬-১৯ কিলোমিটার এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

ট্রপোমন্ডলের বৈশিষ্ট্য 

১। ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর ঘনত্ব কমতে থাকে, সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে উষ্ণতা। সাধারণভাবে প্রতি ১,০০০ মিটার উচ্চতায় ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়।

২। উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়।

৩। নিচের দিকের বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে।

৪। ধূলিকণার অবস্থানের ফলে সমগ্র বায়ুমন্ডলের ওজনের প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ এই স্তর বহন করে।

৫। যে উচ্চতায় তাপমাত্রা বন্ধ হয়ে যায় তাকে ট্রপোবিরতি বলে। এখানে তাপমাত্রা -৫৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে হতে পারে।

স্ট্রাটোমন্ডল (Stratosphere)

ট্রপোপজের (Tropopause) উপরের দিকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত স্ট্রাটোমন্ডল নামে পরিচিত। স্ট্রাটোমন্ডল ও মেসোমন্ডলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রা স্থিতাবস্থাকে স্ট্রাটোপজ (Stratopause) বলে।

স্ট্রাটোমন্ডলের বৈশিষ্ট্য 

১। এই স্তরেই ওজোন (O3) গ্যাসের স্তর বেশি পরিমাণে অবস্থান করে। ওজোন স্তর সূর্যের আলোর বেশিরভাগ অতিবেগুনি রশ্মি (Ultraviolate rays) শুষে নেয়। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

২। এই স্তরের বায়ুতে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা ছাড়া কোনোরকম জলীয়বাস্প থাকে না। ফলে আবহাওয়া থাকে শান্ত ও শুস্ক। ঝড়, বৃষ্টি থাকে না বলে এই স্তরের মধ্য দিয়ে সাধারণত জেট বিমানগুলো চলাচল করে।

৩। প্রায় ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা পুনরায় হ্রাস পেতে শুরু করে। এটি স্ট্রাটোমন্ডলের শেষ প্রান্ত নির্ধারণ করে।

মেসোমন্ডল (Mesosphere)

স্ট্রাটোবিরতির উপরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে মেসোমন্ডল বলে। এই স্তরের উপরে তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া থেমে যায়। এই স্তরকে মেসোবিরতি (Mesopause) বলে।

মেসোমন্ডলের বৈশিষ্ট্য 

১। এই স্তরে ট্রপোমন্ডলের মতোই উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা কমতে থাকে। যা -৮৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নিচে নেমে যায়। মেসোমন্ডল বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে শীতলতম তাপমাত্রা ধারণ করে।

২। মহাকাশ থেকে যে সব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুঁটে আসে সেগুলোর অধিকাংশই এই স্তরের মধ্যে এসে পুড়ে যায়।

তাপমন্ডল (Thermosphere)

মেসোবিরতির উপরে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে তাপমন্ডল বলে। এই মন্ডলে বায়ুস্তর অত্যন্ত হালকা ও চাপ ক্ষীণ। তাপমন্ডলের নিম্ন আয়নমন্ডল (Ionosphere)।

তাপমন্ডলের বৈশিষ্ট্য

১। এই স্তরে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা অত্যন্ত দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়ে ১৪৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পৌঁছায়।

২। তাপমন্ডলের উপরের স্তরে তাপমাত্রার পরিমাণ প্রায় স্থির থাকে।

৩। তীব্র সৌর বিকিরণে রঞ্জন রশ্মি ও অতিবেগুনি রশ্মির সংঘাতে এই অংশের বায়ু আয়নযুক্ত হয়।

৪। ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঠানো বিভিন্ন বেতারতরঙ্গ আয়নমন্ডলের বিভিন্ন আয়নে বাধা পেয়ে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে।

এক্সোমন্ডল (Exosphere)

তাপমন্ডলের উপরে প্রায় ৯৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যে বায়ুস্তর আছে তাকে এক্সোমন্ডল বলে। এই স্তরে হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়।

এক্সোমন্ডলের বৈশিষ্ট্য

১। এক্সোমন্ডল, তাপমন্ডল অতিক্রম করে ৯৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এটি ক্রমান্বয়ে ইন্টারপ্লানেটরি স্পেসে প্রবেশ করে।

২। এ স্তরের তাপমাত্রা প্রায় ৩০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ১৬৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়।

৩। এ স্তরে খুব সামান্য পরিমাণ গ্যাস যেমন- অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, অর্গন এবং হিলিয়াম ধারণ করে, কেননা মাধ্যাকর্ষণের ঘাটতির কারণে গ্যাস অণু বা কণাগুলো সহজে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।

বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তরের গুরুত্ব

১। বায়ুমন্ডল ছাড়া যেমন কোনো শব্দতরঙ্গ স্থানান্তরিত হয় না, তেমনি ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঠানো বেতারতরঙ্গ আয়নস্তরে বাধা পেয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে।

২। ট্রপোমন্ডল ছাড়া কোনো আবহাওয়ারও সৃষ্টি হতো না; বরফ জমত না; মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, শিশির, তুষার, শিলা বৃষ্টি ইত্যাদির সৃষ্টি হতো না। শস্য ও বনভূমির জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টি হতো না।

৩। পৃথিবীতে বায়ুমন্ডলীয় স্তর থাকায় এর দিকে আগত উল্কাপিন্ড অধিক পরিমাণে বিধ্বস্ত হয়। ওজোন স্তর না থাকলে সূর্য থেকে মারাত্মক অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে প্রাণীকুল বিনষ্ট করত।

৪। বায়ুমন্ডলের স্তরসমূহ না থাকলে পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব থাকতো না, বরং পৃথিবীর উপরিভাগ চাঁদের মতো মরুময় হতো।

No comments