Breaking News

মোহিতলাল মজুমদারের গ্রন্থপঞ্জী ও সম্পাদনা

(২৬শে অক্টোবর, ১৮৮৮ --- ২৬শে জুলাই, ১৯৫২)
🌍🌍¤ সাহিত্যজীবন :-
মোহিতলাল মজুমদারের লেখা প্রথম প্রকাশিত হয় "মানসী" পত্রিকায়। "বীরভূমি" পত্রিকায় "কবিতা,  প্রবন্ধ ও অনুবাদ প্রকাশ করেন। পরে "ভারতী" এবং "শনিবারের চিঠি" পত্রিকাতেও নিয়মিত লেখেন।  পুষ্পপ্রিয় কবি দেবেন্দ্রনাথ সেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের ফলে তাঁর কাব্যচর্চায় কবি দেবেন্দ্রনাথ সেনের প্রভাব দেখা যায়। এছাড়াও, কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতার ছন্দোমাধুর্য তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। মোহিতলাল মজুমদার বেশ কিছুকাল "ভারতী গোষ্ঠী"-র অন্যতম লেখক ছিলেন। তিনি শনিচক্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। রবীন্দ্র পরবর্তী কাব্যে কবি মোহিতলালের স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্য-সমালোচক হিসাবেও তাঁর সবিশেষ খ্যাতি ছিল। ভাষারীতির বিশুদ্ধতা নিয়ে তাঁর প্রবল আগ্রহ ও নিষ্ঠা ছিল। কবি, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচকরূপে তিনি বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করেন। মৌলিক গ্রন্থ (কাব্যগ্রন্থ, প্রবন্ধগ্রন্থ), সমালোচনা ও সম্পাদিত গ্রন্থ মিলিয়ে মোহিতলাল মজুমদারের প্রকাশিত গ্রন্থ অনেক।

🌍🌍¤ গ্রন্থপঞ্জী :-
♣¤ কাব্যগ্রন্থ :-
১) "দেবেন্দ্র-মঙ্গল" (১৯২২)
★তথ্য :- এই গ্রন্থটি আত্মীয় ও কবি দেবেন্দ্রনাথ সেনের প্রশস্তিমূলক (শ্রদ্ধাঞ্জলিমূলক) ১৬টি সনেটের সংকলন।
২) "স্বপনপসারী" (১৯২২)
৩) "বিস্মরণী" (১৯২৭)
৪) "স্মরগরল" (১৯৩৬)
৫) "হেমন্তগোধূলি" (১৯৪১)
৬) "ছন্দ চতুর্দশী" (১৯৪১) [সনেট সংকলন]
★তথ্য :- এই গ্রন্থটি ৫৪টি সনেটের সংকলন।

♦¤ কাব্য-সংকলন গ্রন্থ :-
১) "কাব্য মঞ্জুষা" (১৯৫০)

♠¤ প্রবন্ধগ্রন্থ ও সমালোচনা গ্রন্থ :-
সাহিত্যতত্ত্ব, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং আধুনিক সাহিত্যের উপর নানা গ্রন্থ রচনা করেছেন। যথা ---

১) "আধুনিক বাংলা সাহিত্য" {উনিশ শতক} (১৯৩৬)
২) "সাহিত্যকথা" (১৯৩৮)
৩) "বিবিধ কথা" (১৯৪১)
৪) "বিচিত্র কথা" (১৯৪১)
৫) "সাহিত্য বিতান" (১৯৪২)
৬) "বাঙলা কবিতার ছন্দ" (১৯৪৫)
৭) "বাঙলার নবযুগ" (১৯৪৫)
৮) "জয়তু নেতাজী" (১৯৪৬)
৯) "কবি শ্রীমধুসূদন" (১৯৪৭)
১০) "সাহিত্য বিচার" (১৯৪৭)
১১) "বঙ্কিম-বরণ" (১৯৪৯)
১২) "রবি-প্রদক্ষিণ" (১৯৪৯)
১৩) "শ্রীকান্তের শরৎচন্দ্র" (১৯৫০)
১৪) "জীবন জিজ্ঞাসা" (১৯৫১)
১৫) "বাঙলা ও বাঙালী" (১৯৫১)
১৬) "কবি রবীন্দ্র ও রবীন্দ্র কাব্য" (১ম খণ্ড : ১৯৫২ ও ২য় খণ্ড : ১৯৫৩)
১৭) "বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস" (১৯৫৫)
১৮) "বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ" (১৯৬২)
১৯) "বিবিধ প্রবন্ধ"

♥¤ উল্লেখযোগ্য কবিতা :-
১) "পান্থ"
২) "মিলন উৎকণ্ঠা"
৩) "বাঁধন"
৪) "স্বপ্ন নহে"
৫) "আমি"
৬) "বুদ্ধ"
৭) "গজলগান"
৮) "প্রেতপুরী"
৯) "পাপ"
১০) "কলস-ভরা"
১১) "মোহমুদগর"
১২) "কালাপাহাড়"
১৩) "নুরজাহান ও জাহাঙ্গীর"
১৪) "ব্যথার আরতি"
১৫) "নারীস্তোত্র"
১৬) "রুদ্র বোধন"
১৭) "বসন্ত বিদায়"
১৮) "অঘোরপন্থী"     
১৯) "কালবৈশাখী"            
২০) "দেবেন্দ্রনাথের সনেট"   
২১) "নাদিরশাহের শেষ"         
২২) "বঙ্গলক্ষ্মী"    
২৩) "বসন্ত আগমনী"              
২৪) "মানস-লক্ষ্মী"               
২৫) "মৃত্যু ও নচিকেতা"           
২৬) "রূপ-দর্পণ"     
২৭) "শুভক্ষণ"     
২৮) "শেষ শিক্ষা"               
২৯) "স্মরগরল"

🌍🌍¤ সম্পাদনা/সম্পাদিত "বঙ্গদর্শন" পত্রিকা :-
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত "বঙ্গদর্শন" পত্রিকা বাংলা সাহিত্যে উন্মাদনার জোয়ার এনেছিল। দীর্ঘদিন পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এরপর "বঙ্গদর্শন" পত্রিকা পুনরায় প্রকাশিত হতে শুরু করে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই আগস্ট। মোহিতলাল মজুমদার হন সম্পাদক। মোহিতলাল মজুমদারের সম্পাদনায় "বঙ্গদর্শন" পত্রিকা প্রকাশ হতে শুরু করে প্রথম বছর ১৩৫৪ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাস থেকে, দ্বিতীয় বছর শুরু হয়েছিল ১৩৫৫ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাস থেকে। এরপর আরও ৬টি সংখ্যা মোহিতলালের সম্পাদনায় "বঙ্গদর্শন" পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

                  মোহিতলাল মজুমদার সম্পাদিত "বঙ্গদর্শন" পত্রিকায় বিশিষ্ট লেখকদের প্রতিকৃতি, প্রাচীন লেখকদের রচনার পুনঃপ্রকাশ "শ্রুতি-স্মৃতি" বিভাগ শুরু হয়। "মাধুকরী" বিভাগে বিদেশি সাহিত্যের অনুবাদ প্রকাশিত হতে শুরু করে। শুরু হয় "মণিমঞ্জুষা" নামে কবিতা চয়ন বিভাগ। মোহিতলাল মজুমদার ঘোষণা করেন, --- "বঙ্গদর্শন মুখ্যত সাহিত্য ও সৎ চিন্তা চর্চা করে, পলিটিক্সের সঙ্গে তাহার দূরতম সম্পর্কও নাই।" বাংলা বিভাগকে তিনি কখনও মেনে নিতে পারেননি, "বঙ্গদর্শন" পত্রিকায় এজন্য তিনি সম্পাদকীয় প্রবন্ধ লেখেন। তাঁর কাছে বাংলা বিভাগ ছিল "হিন্দু বাংলার অন্ত্যোষ্টি কর্ম।" বাঙালির স্বাধীনতা প্রসঙ্গে মোহিতলাল "বঙ্গদর্শন" পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখেন, --- "পলিটিকস্', ধর্ম ও সাহিত্য -- বাংলাদেশে এই তিনের মিলন হইয়াছে; আগে ছিল ধর্ম ও পলিকিকস্, পরে তাহাতে সাহিত্যও যুক্ত হইয়াছে। ধর্ম ও পলিটিকস্ এই দুইকে এক মহা-রাসায়নিক কৌশলে মিশ্রিত করিয়া যে স্বাধীনতা প্রদয়িনী সুধা প্রস্তুত হইয়াছে, তাহা পান করিয়া আমরা বিনা রক্তপাতে স্বাধীনতা লাভ করিয়াছি; ইতিহাস লজ্জায় লাল হইয়াছে, জগৎ বিস্ময়ে হাঁ করিয়া পেটের খিল-ধরা নিবারণ করিতেছে।"
                 "বঙ্গদর্শন" পত্রিকার ১৩৫৪ বঙ্গাব্দের চৈত্রসংখ্যায় প্রকাশিত হয় মোহিতলাল মজুমদারের "হিন্দুধর্ম ও ভারত পন্থা" প্রবন্ধ। ১৩৫৫ সালের ফাল্গুন সংখ্যা ছিল মোহিতলাল সম্পাদিত "বঙ্গদর্শন" পত্রিকার শেষ সংখ্যা। দ্বিতীয় বছরের সপ্তম সংখ্যায় মোহিতলাল মজুমদার আর "বঙ্গদর্শন" পত্রিকার সম্পাদক রইলেন না। ১৩৫৬ সালের শ্রাবণ মাসের "বঙ্গদর্শন" পত্রিকায় তিনি লিখলেন, --- "যাহা একজনের ওপর নির্ভর করে, তাহার স্থায়িত্ব অনিশ্চিত। বঙ্গদর্শন যতদিন আমার ইচ্ছা, প্রবৃত্তি, স্বাস্থ্য বা জীবনের ওপর নির্ভর করিবে, ততদিন বঙ্গদর্শনের স্থায়িত্ব অসম্ভব। এজন্য আমি বঙ্গদর্শনের সম্পাদকীয় কার্য পরিত্যাগ করিলাম।" মোহিতলাল  সম্পাদিত "বঙ্গদর্শন" পত্রিকা যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। মোহিতলাল মজুমদারের "শ্রীকান্তের শরৎচন্দ্র" (প্রকাশসাল : ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ) ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের বিলাত-প্রবাসী সন্ন্যাসীর চিঠি প্রভৃতি অনেক মূল্যবান প্রবন্ধ মোহিতলাল সম্পাদিত "বঙ্গদর্শন" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। অতএব, "বঙ্গদর্শন" পত্রিকার তৃতীয় পর্যায় মোহিতলাল মজুমদার প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন।

No comments