Breaking News

ঋতু পরিবর্তন কাকে বলে? ঋতু পরিবর্তনের কারণ

 তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে প্রতিটি বছরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটি ভাগকে এক একটি ঋতু বলে। এক ঋতু থেকে আরেক ঋতুর এই পর্যায় ক্রমিক পরিবর্তনকে ঋতু পরিবর্তন বলে। তাপমাত্রার পার্থক্য অনুসারে একটি বছরকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়- গ্রীষ্মকাল, শরৎকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল।

আমরা জানি, পুরো পৃথিবীকে দুটি গোলার্ধে ভাগ করা হয়েছে। নিরক্ষরেখার উপরের দিকের অংশকে উত্তর গোলার্ধ এবং নিচের দিকের অংশকে দক্ষিণ গোলার্ধ হিসেবে ধরা হয়। উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শীতকাল। আবার উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল তখন দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল। তেমনি উত্তর গোলার্ধে যখন বসন্তকাল দক্ষিণ গোলার্ধে তখন শরৎকাল। আবার উত্তর গোলার্ধে যখন শরৎকাল দক্ষিণ গোলার্ধে তখন বসন্তকাল।

আমাদের দেশের ভৌগলিক অবস্থান উত্তর গোলার্ধে। তাই বাংলাদেশে জুন মাসের দিকে বেশি গরম অনুভূত হয়। এই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল।

ঋতু পরিবর্তনের কারণ

প্রকৃতি চলে কিছু ধরা বাঁধা নিয়ম মেনে। ঋতু পরিবর্তন হওয়ারও কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা ও চিত্রসহ নিম্নে তুলে ধরা হলো-

(১) পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিবারাত্রির পার্থক্যের কারণে তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধিঃ পৃথিবীর ঘুর্ণনের কারণে সূর্য পৃথিবীর যে গোলার্ধের নিকট অবস্থান করে তখন সেই গোলার্ধে দিন বড় এবং রাত ছোট। তার বিপরীত গোলার্ধে  রাত বড়, দিন ছোট। সাধারণত দিনের বেলায় পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ তাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয় এবং রাতের বেলায় তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়।

কোন স্থানে বড় দিন হলে ভূপৃষ্ঠ যে তাপ গ্রহণ করে, ছোট রাতে সেই তাপ পুরোটা বিকিরণ করতে পারে না। ঐ স্থানে সঞ্চিত তাপের কারণে আবহাওয়া উষ্ণ হয় এবং তাতে সে স্থানে গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া দেখা যায়।

আবার বিপরীত গোলার্ধে রাত বড় এবং দিন ছোট হওয়াতে দিনের বেলায় ভূপৃষ্ঠ যে তাপ গ্রহণ করে রাতের বেলায় ভূপৃষ্ঠ সব তাপ বিকিরণ করতে পারে। তাই সেই স্থানে ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে, অর্থাৎ সে অঞ্চলে তখন শীতকাল অনুভূত হয়।

(২) পৃথিবীর গোলাকার আকৃতিঃ আমরা জানি, আমাদের পৃথিবী অনেকটা গোলাকার। তাই পৃথিবীর কোন স্থানে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে আবার কোথাও সূর্যরশ্মি তীর্যকভাবে পড়ে। ফলে তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা যায় এবং ঋতু পরিবর্তিত হয়।

(৩) পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথঃ আমরা জানি, সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘোরে। কিন্তু পৃথিবীর এই আবর্তন পথটি বৃত্তাকার নয়, বরং উপবৃত্তাকার। তাই বছরের বিভিন্ন সময় সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব কমবেশি হয়। স্বাভাবিকভাবেই এতে পৃথিবীর তাপমাত্রায় তারতম্য দেখা যায় এবং ঋতু পরিবর্তন হয়।

(৪) পৃথিবীর কক্ষপথে কৌণিক অবস্থানঃ সূর্যকে পরিক্রমণের সময় নিজ কক্ষতলের সাথে পৃথিবীর মেরুরেখা সমকোণে না থেকে ৬৬.৫ ডিগ্রী কোণে হেলে একই দিকে অবস্থান করে। এতে বছরে একবার সূর্যের উত্তর মেরু ও একবার দক্ষিণ মেরু সূর্যের নিকটবর্তী হয়। যে গোলার্ধ যখন সূর্যের দিকে ঝুকে থাকে সে গোলার্ধে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়। সেই গোলার্ধে তাপমাত্রা তখন বেশি হয় এবং সূর্য থেকে দূরে গেলে আবার তাপমাত্রা কমে যায়। এতেও ঋতু পরিবর্তন ঘটে।

(৫) বার্ষিক গতির কারনেঃ পৃথিবীর বার্ষিক গতির জন্য সূর্যকিরণ বিভিন্ন স্থানে কমবেশি পড়ার কারণে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার পার্থক্য ঘটে থাকে। ফলে বিভিন্ন স্থানে জলবায়ু ও তাপমাত্রায় পার্থক্য দেখা যায় এবং ঋতু পরিবর্তন ঘটে।

ঋতু পরিবর্তন প্রক্রিয়া

আমরা জানি, পৃথিবীতে চারটি ঋতু- গ্রীষ্মকাল, শরৎকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল। আমরা এখন দেখবো ঋতু কীভাবে পরিবর্তির হয়। সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবীর চারটি অবস্থা থেকে ঋতু পরিবর্তনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকালঃ

২১ মার্চের পর থেকে পৃথিবী তার নিজ কক্ষপথে এগিয়ে চলার সাথে সাথে উত্তর মেরু ক্রমশ সূর্যের দিকে হেলতে থাকে। এতে যত দিন যায় তত উত্তর মেরুতে আলোকিত অংশ বাড়তে থাকে। এভাবে ২১ জুন গিয়ে সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দিতে থাকে। ফলে ২১ জুন উত্তর গোলার্ধে দিন বড় ও রাত ছোট হয়। ঐ দিনই সূর্যের উত্তরায়ণের শেষ এবং তার পরের দিন থেকে পুনরায় সূর্য দক্ষিণ দিকে আসতে থাকে।

দিন বড় হওয়ার কারণে উত্তর গোলার্ধে ২১ জুনের দেড় মাস আগে থেকেই গ্রীষ্মকাল শুরু হয় এবং পরের দেড় মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল স্থায়ী হয়। এই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক বিপরীত অবস্থা দেখা যায় অর্থাৎ শীতকাল অনুভূত হয়। এ সময় সূর্য হেলে থাকার কারণে এ গোলার্ধে সূর্য কম সময় আলো দেয়। ফলে দিন ছোট এবং রাত বড় হয়। দিনে ভূপৃষ্ঠ যতটুকু উত্তপ্ত হয়, রাতে তাপ বিকিরণের ফলে তা ঠাণ্ডা হয়ে যায়।


উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকালঃ

২১ জুন থেকে দক্ষিণ মেরু সূর্যের দিকে হেলতে থাকে। তাই উত্তর গোলার্ধের অংশগুলো কম কিরণ পেতে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের অংশগুলো বেশি সূর্যকিরণ পেতে থাকে। এভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। তাই এই সময় পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান হয়। দিনের বেলায় যে তাপ ভূপৃষ্ঠ শোষণ করে, রাত সমান হওয়ার কারণে একই পরিমাণ তাপ বিকিরিত হওয়ার সুযোগ পায়। ফলে আবহাওয়াতে ঠাণ্ডা গরমের পরিমাণ সমান থাকে। এই সময় উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল বিরাজ করে। ২৩ সেপ্টেম্বরের দেড় মাস আগে থেকেই উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল শুরু হয় এবং দেড় মাস পর পর্যন্ত এই শরৎকাল স্থায়ী থাকে।

উত্তর গোলার্ধে শীতকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকালঃ

২৩ সেপ্টেম্বরের পর দক্ষিণ গোলার্ধ ক্রমশ সূর্যের দিকে হেলতে থাকে। এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের কাছে আসতে থাকে। আর উত্তর গোলার্ধ দূরে সরে যেতে থাকে। ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় ও উত্তর গোলার্ধে কৌণিকভাবে কিরণ দেয়। এতে উত্তর গোলার্ধে দিন ছোট ও দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড় হয়। এর মধ্যে ২২ ডিসেম্বর সূর্য মকরক্রান্তি অঞ্চলের উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। সেই দিন উত্তর গোলার্ধে ছোট দিন ও বড় রাত হওয়াতে শীতকাল। ঐ দিনই সূর্যের দক্ষিণায়নের শেষ এবং তার পরের দিন থেকে পুনরায় সূর্য উত্তর দিকে আসতে থাকে। ২২ ডিসেম্বরের দেড় মাস আগেই উত্তর গোলার্ধে শীতকাল শুরু হয় এবং পরবর্তী দেড় মাস পর্যন্ত এই শীতকাল চলতে থাকে। এই সময়টায় দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল।

 উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকালঃ

পৃথিবী তার কক্ষপথে চলতে চলতে ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত এমন স্থানে ফিরে আসে যখন সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দিতে থাকে। ফলে ২১ মার্চ পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত সমান হয়। দিনের বেলায় সূর্য কিরণের কারণে ভূপৃষ্ঠের বায়ুস্তর গরম হয় এবং রাত্রিবেলায় তাপ বিকিরিত করে ঠাণ্ডা হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল।

মানব জীবনে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবঃ

আমাদের জীবনে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব অপরিসীম। বলা যেতে পারে, ঋতু পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করেই আমাদের জীবন যাপন আবর্তিত হয়। নিম্নে মানব জীবনে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরা হলো-

(১) ঋতু পরিবর্তন আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

(২) ঋতু পরিবর্তন মাথায় রেখেই কৃষি কাজ করা হয়।

(৩) ঋতু পরিবর্তন জীবজগতের বৃদ্ধি, বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করে।

(৪) ঋতু পরিবর্তনের কারণে আমরা অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হই।

(৫) ঋতু পরিবর্তন আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

No comments