Breaking News

ইভিএম কী? কীভাবে এলো? ব্যবহার কতটা নিরাপদ?



ইভিএম কী? কীভাবে এলো? ব্যবহার কতটা নিরাপদ?
====================================



গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগে মেশিন বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি অণুসৃত হয় বলে সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নামে পরিচিত। এর অন্য নাম ই-ভোটিং।



এতে একটি মেশিনে প্রায় চার হাজারটি পর্যন্ত ভোট দেয়া যায়। সর্বোচ্চ ৬৪ জন প্রার্থীর তালিকা থাকে। বাটন চাপ দিয়ে অক্ষরজ্ঞানহীন ব্যক্তিও ভোট দিতে পারে। একটি ভোট দিতে আনুমানিক ১৪ সেকেন্ড সময় লাগে।
একজন ভোটারের কোনভাবেই একটির বেশি ভোট দেয়ার সুযোগ থাকে না। সাধারণ ব্যালট ভোটের মতো কেন্দ্রেও সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্টরা, নেতাকর্মীরাসহ পর্যবেক্ষকরাতো থাকবেই। মেশিনটিতে একটি পূর্ব-প্রোগ্রামিং করা মাইক্রোচিপ থাকে যা প্রতিটি ভোটের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে হিসেব করে প্রদর্শন করে।



এতে ব্যালট কাগজে সিল মারার পরিবর্তে ভোটার পছন্দের প্রতীকের পাশের সুইচ টিপে ভোট দিতে পারেন। প্রতিটি বুথে একটি ইভিএমের প্রয়োজন পড়ে। এটি কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করা থাকে। ইউনিটগুলো নিম্নরূপ-
১. ব্যালট ইউনিট: ব্যালট ইউনিটটি থাকে বুথের ভেতর। এর মাধ্যমে ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন।



২. কন্ট্রোল ইউনি: কন্ট্রোল ইউনিট থাকে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের সামনের টেবিলে।
৩. ডিসপ্লে ইউনিট: ইভিএমের সঙ্গে একটি বড় ডিসপ্লে ইউনিট রাখা হয়েছে, যা এমন স্থানে রাখা হয় যাতে বুথের ভেতর ভোট-সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টিগোচর হয়।



৪. ব্যাটারি ইউনিট: এই মেশিন চালাতে দরকার হয় ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি। ব্যাটারিতে মেশিনটি সারাদিন চলতে পারে ফলে বাড়তি কোন বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না।

৫. স্মার্ট কার্ড ও মাস্টার কার্ড: একটি ভোটিং মেশিন পরিচালনা করার জন্য সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে একটি করে স্মার্ট কার্ড-ভিত্তিক আইডি কার্ড দেওয়া হয়, যে কার্ডটি ছাড়া কন্ট্রোল ইউনিট পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। ইউনিটগুলো ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকলেও তারের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে।
                                                     
ইভিএম কীভাবে কাজ করে?
ভোট গ্রহণের স্থান হিসেবে ভোট কেন্দ্রেই মূলতঃ ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ইন্টারনেট, ব্যক্তিগত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, টেলিফোন ব্যবহার করেও ই-ভোটিং প্রয়োগ করা সম্ভবপর। নতুনতর অপটিক্যাল স্ক্যান ভোটিং পদ্ধতিতে পাঞ্চ কার্ড, অপটিক্যাল স্ক্যানার ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে একজন ভোটার নির্বাচনী-পত্রী বা ব্যালট পেপারকে চিহ্নিত করে ভোট প্রদান করে।



অন্যদিকে ডিআরই ভোটিং পদ্ধতিতে একটিমাত্র মেশিনের সাহায্যে ভোট সংগ্রহ ও গণনা কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়। ব্রাজিল এবং ভারতে সকল ভোটার সকল ধরনের নির্বাচনে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও ভেনেজুয়েলা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে ডিআরই ভোটিং পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে।



একটি নির্বাচন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে থাকে ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট। এই ইউনিটের সম্মুখভাগে থাকে ডিজিটাল ডিসপ্লে। বিপরীত দিকে থাকে স্টার্ট সুইচ, ব্যালট নামক সুইচ, মেমোরী রিসেট সুইচ, ফাইনাল রেজাল্ট সুইচ এবং ক্লোজ বাটনসহ আরো কিছু সুইচ। ভোট শুরু করার জন্য স্টার্ট সুইচটি চাপতে হয়।



তারপর ব্যালট সুইচটি চেপে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে ভোট দিতে বুথে পাঠান। এই সুইচটি চাপলে বুথের মধ্যে থাকা ইভিএমের অপর অংশ ব্যালট ইউনিটটি একটি ভোট দেয়ার জন্য কার্যকর হয়। ভোট দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার অকার্যকর হয়ে যায় ব্যালট ইউনিটটি।



যতক্ষণ না আবার কন্ট্রোল ইউনিটের ব্যালট সুইচ চাপা হচ্ছে। ভোটদান শেষে ভোটার বেরিয়ে গেলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আবার ব্যালট সুইচ চেপে ব্যালট ইউনিটটি কার্যকর করেন। এভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হলে ক্লোজ সুইচটি চাপলেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং ফাইনাল রেজাল্ট সুইচটি কার্যকর হবে।



এটি এক এক করে চেপে চললে ব্যালট ইউনিটে সাজানো ক্রমানুযায়ী একের পর এক প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বেরিয়ে আসে। ইভিএমের অপর অংশ ব্যালট ইউনিটটি রাখা হয় বুথের ভেতর। ভোটার ঢুকে দেখবেন ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে একটি সবুজ বাতি জ্বলছে।



অর্থাৎ আপনার ভোট দিন। ব্যালট ইউনিটের ওপর প্রার্থীর নাম ও প্রতীক সাজানো থাকে। প্রত্যেক প্রতীকের পাশে থাকে একটি করে সুইচ। ভোটার তার পছন্দের প্রতীকটির পাশের সুইচটি চাপবেন। ভোটটি গৃহীত হলে ভোটার ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে থাকা লাল বাতিটি জ্বলতে দেখবেন।



অর্থাৎ ভোটটি গৃহীত হয়েছে। নতুন ভোটটি গৃহীত হলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে রাখা কন্ট্রোল ইউনিটের সামনের ডিসপ্লেতে একটি ভোট যোগ হবে। এরপর তিনি আবার অন্য কাউকে ভোটদানের অনুমতি দিয়ে বুথে পাঠালে ভোটার গিয়ে ব্যালট ইউনিটে সবুজ বাতি জ্বলতে দেখবেন। এভাবেই চলতে থাকবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া।
                                                          ইভিএমের ৭টি ভাল দিক
ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে যেসব সুবিধার কথা বলা হয় তা নিম্নরূপ-



১। ইভিএম ব্যবহারের ফলে কোটি কোটি সংখ্যক ব্যালট ছাপানোর খরচ, কাগজের খরচ, এগুলো পরিবহনের খরচ, ভোট গণনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকবলের খরচ সবই সাশ্রয় হবে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী একটি জাতীয় নির্বাচনে এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ইভিএম পদ্ধতিতে একটি জাতীয় নির্বাচনে খরচ হবে মাত্র নয়শ’ কোটি টাকা।



২। একটি মেশিন দিয়ে চার-পাঁচটি জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব। চাইলে এটা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন বা উপ নির্বাচনেও কাজে লাগানো যাবে। সেক্ষেত্রে শুধু মেশিনটিতে নতুন করে প্রোগ্রাম প্রবেশ করাতে হবে।
৩। এই প্রক্রিয়ায় কোনো ভোটারের ভোট বাতিল হবে না। ভোটের তথ্য মেশিনে প্রায় ১০ বছর ধরে অবিকৃত অবস্থায় থাকবে।



৪। ১২ ভোল্টের ব্যাটারী চালিত বিধায় ইভিএম ব্যবহারকালে ইলেকট্রিক শক খাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
৫। একজন ভোটার ভোট দেয়ার পর ১০ থেকে ১২ সেকেন্ড ব্যালট ইউনিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর থাকে। ফলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ইচ্ছা করলেও একজন ভোটারকে একাধিক ভোট দানের সুযোগ করে দিতে পারবেন না।



৬। কোন কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কন্ট্রোল ইউনিটের ক্লোজ সুইচটি চেপে দিলেই দখলকারীরা কোনো ভোট দিতে পারবে না। তাছাড়া ইভিএমের স্মার্ট কার্ড সরিয়ে ফেললেও মেশিনটি চালু করা যাবে না। আবার প্রতি মিনিটে ৫টার বেশি ভোট দেয়া যাবে না।
৭। খুবই কম সময়ে ভোট গণনার কাজ সম্পন্ন হয়।
                                                         
                                             ইভিএমের ৭টি খারাপ দিক


আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া হলেও ইভিএম নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ। যেমন-
১। কথায় আছে জোর যার মুল্লুক তার। অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের দ্বারা কেন্দ্র দখলের পর পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক সংখ্যক ভোট শক্তির মালিক হবে প্রভাবশালীমহল।



২। বরাবরই শোনা যায় যে নির্বাচন কমিশনে দলীয় লোক ঢুকে পড়ে। এমনটা ঘটলে তাদের কেউ যদি প্রতি কেন্দ্রে অন্তত একটি করে মেশিনে এ প্রোগ্রাম করে দেন যে, নির্বাচন শেষে ক্লোজ বাটনে ক্লিক করলেই যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট কোনো প্রতীকে অতিরিক্ত ২০০/৩০০ ভোট যুক্ত হবে তাহলে সহজেই নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়া সম্ভব।



৩। দুই নং প্রক্রিয়ায় মাইক্রোকন্ট্রোলারের প্রোগ্রাম পরিবর্তনের সুযোগ হলে কোন কেন্দ্রে সকল প্রার্থী একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক (২০ বা ৫০ বা ১০০) ভোট পাবার পর যে কোন ব্যালট বাটনে চাপলেই অতিরিক্ত ভোট দখলকারী প্রার্থীর প্রতীকে যুক্ত হবে, এমন প্রোগ্রামও লিখে ব্যালট ছিনতাই সম্ভব।
৪। যদি নির্বাচনী কর্মকর্তার স্মার্ট কার্ডের নকল কার্ড তৈরি করা হয় এবং তা যদি ইভিএমের প্রোগ্রামকে বিভ্রান্ত করে একবারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট কাস্ট করে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হয় তাহলে তা নির্বাচনের ফলাফলকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দিবে।



৫। গোপনে যে ইভিএম সরবরাহ করা হবে না এমন নিশ্চয়তা অন্তত বাংলাদেশে আশা করা যায় না। ইভিএমের প্রতিটি ইউনিট চালু অবস্থায় পৃথক করা যায়। প্রভাবশালীদের দ্বারা কেন্দ্র দখলের পর গোপনে সরবরাহকৃত অগ্রিম ভোট দেয়া ইভিএমের শুধুমাত্র কন্ট্রোল ইউনিট প্রতিস্থাপন করলেই চলবে। ফলাফল শতভাগ অনুকূলে।



৬। মাইক্রোকন্ট্রোলার চিপ নিয়ন্ত্রিত এই ইভিএমের প্রতিটি স্মার্টকার্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন) ট্যাগ। অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতা পেলে কোন প্রার্থীর কর্মীরা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে কয়েকশ মিটার দূর থেকেও কন্ট্রোল ইউনিট নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।



৭। বাংলাদেশের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনটি ভারতের মেশিনগুলোর কাছাকাছি মানের। ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ‘ভারতের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন জালিয়াতি প্রতিরোধক নয়’ দাবি করে একদল মার্কিন আইটি বিশেষজ্ঞ বক্তব্য রাখে। তারা বলেন, ‘ভারতের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন জালিয়াতি প্রতিরোধক নয় এবং দেশটির নির্বাচন কমিশনকে স্বচ্ছ ও নিরাপদ ভোট গ্রহণ ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা উচিত।’ 



বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেন আডিডা, মাইক্রোসফট গবেষক ড. জোশ বেনালো ও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাট ব্লেইজ। তারা বলেন, ‘ইভিএম তৈরির পর নতুন ধরনের নিরাপত্তা হামলার বিষয় জানা গেছে ও ইভিএমের নিরাপত্তার বিষয়টি পুরনো হয়ে গেছে।
বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী ফলাফলের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও যাচাইযোগ্যতা ভারতীয় ইভিএম দিতে পারে না।’ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের সভাপতি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ভারত সফল হলেও এ পদ্ধতিতে ব্যর্থ হয়েছে অধিকাংশ দেশ। আমাদের দেশে যে মেশিনটা তৈরি করা হয়েছে তা আধুনিক তবে অত্যাধুনিক নয়।



                          কোন কোন দেশে দেশে ইভিএম পদ্ধতি চালু আছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইভিএম পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই পদ্ধতি প্রথম চালু হয় যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ সালে। এর ৪ বছরের মধ্যেই ৭টি রাজ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতি নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।



আইনগতভাবে আমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, কাজাখস্তান, পেরু, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভেনিজুয়েলায় চালু রয়েছে ইভিএম প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট গ্রহণ পদ্ধতি। এছাড়া আর্জেন্টিনা, ইতালি, মেক্সিকো, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশকিছু দেশে এখনো এই ব্যবস্থা নিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।



আবার এটাও ঠিক যে বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর প্রায় ৮৫ ভাগ দেশেই এই পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে। এর পেছনে মেশিন যতটা না দায়ী ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক ও অন্যান্য কিছু সমস্যা।
                                            
যেসব প্রতিষ্ঠান ইভিএম তৈরি করে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইভিএম মেশিন তৈরি করে থাকে। বাংলাদেশেও তৈরি হয়। পাইল্যাব বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইভিএম মেশিন তৈরি করে থাকে। ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার অন্যতম উপকরণ ইভিএম প্রস্তুতকারী দেশসমূহের প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা নিম্নে দেয়া হলো-



১. ভারত ইলেকট্রনিকস্‌ লিমিটেড, ভারত
২. ডোমিনয়ন ভোটিং সিস্টেমস্‌, কানাডা
৩. ইলেকট্রনিকস্‌ কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড, ভারত
৪. ইএসএন্ডএস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৫. হার্ট ইন্টারসিভিক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৬. নেড্যাপ, নেদারল্যান্ডস
৭. প্রিমিয়ার ইলেকশন সল্যুশনস্‌, (সাবেক ডাইবোল্ড ইলেকশন সিস্টেমস্‌) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৮. সিকোইয়া ভোটিং সিস্টেমস্‌, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৯. ভোটেক্স বা টিএম টেকনোলোজিস্‌ ইলেকশনস্‌ ইনকর্পোরেট, কানাডা
১০. এছাড়াও আকুপোল, এডভান্সড্‌ ভোটিং সল্যুশনস্‌, মাইক্রোভোট, স্মার্টম্যাটিক, ইউনিল্যাক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন প্রস্তুতকারক হিসেবে খ্যাত।
                                         
বাংলাদেশে ইভিএমের জানা-অজানা


২০০৭ সালে ঢাকার অফিসার্স ক্লাবের কার্যকরী সংসদের নির্বাচনে এ পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করা হয়। ছোট নির্বাচনে সফলতার পর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে এ প্রকল্প জমা দেন উদ্ভাবক, বুয়েটের আইআইসিটি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এস এম লুৎফল কবির এবং প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পাইল্যাব বাংলাদেশ। তখন ছবি সংবলিত ভোটার তালিকার কাজ চলার কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।



পরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমকে সামনে রেখে ১৩০টি ইভিএম তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ১০০টি ইভিএম চট্টগ্রামে আনা হয়। তবে ১৪ ভোট কেন্দ্রের ৭৯টি বুথে ৭৯টি ও প্রতি কেন্দ্রের জন্য একটি অতিরিক্ত হিসাবে মোট ৯৩টি ইভিএম স্থাপন করা হয়।



২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে সফলতা আসে। সেখানে মোট ২৫ হাজার ২৩৮ জন ভোটার ইভিএমে ভোট প্রদান করেন। দ্রুত ভোট গ্রহণ ও দ্রুত ফলাফল ঘোষণায় ইভিএম পদ্ধতির সফল কার্যকারিতার প্রমাণ মেলে।



এ নির্বাচনে ভোট গণনার ক্ষেত্রে অন্য ওয়ার্ডগুলোতে যেখানে তিন থেকে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে, এ ক্ষেত্রে জামাল খান ওয়ার্ডে এক ঘণ্টার মধ্যেই ফল ঘোষণা সম্ভব হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞমহল মনে করছে জাতীয় নির্বাচনের মত বৃহৎ পরিসরে কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে যে কোন দলের জন্যই এ পদ্ধতি হবে অনেক বেশি হতাশাজনক।



ইভিএমের আরও কিছু অজানা তথ্য
ইভিএমের একটি ব্যালট ইউনিটে ১২ জন প্রার্থীর জন্য ব্যবস্থা থাকে। চাইলে এর সঙ্গে আলাদা আরো পাঁচটি ব্যালট ইউনিট যোগ করে মোট ৬০ জন প্রার্থীর ভোট নেয়া সম্ভব। কোথাও ১২ জনের কম প্রার্থী থাকলে ফাঁকা প্রতীকের সুইচগুলো থাকবে অকার্যকর।



ব্যালট ইউনিট অথবা কন্ট্রোল ইউনিট বিকল হলে কি করা যাবে এ কথা মাথায় রেখে প্রতিটি কেন্দ্রে একটি অতিরিক্ত ইভিএম দেয়া হবে। প্রদত্ত ভোটের হিসাব কন্ট্রোল ইউনিটে সংরক্ষিত থাকে, তাই কোনো ব্যালট ইউনিট বিকল হলে ভালো ইউনিট দিয়ে সেটিকে প্রতিস্থাপন করলেই চলবে।



কন্ট্রোল ইউনিটও অনুরূপভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়। এ ক্ষেত্রে বিকল কন্ট্রোল ইউনিটে সংগৃহীত ভোট নষ্ট হবে না। নতুন কন্ট্রোল ইউনিটের ফলাফলের সঙ্গে বিকল কন্ট্রোল ইউনিটের ফলাফল যোগ করে ভোটের ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। এ প্রক্রিয়ায় সারা দিনের ভোট প্রদান শেষ হলে মেশিন অতি দ্রুত জানিয়ে দেবে কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন।



সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ফাইনাল রেজাল্ট সুইচটি চাপলে ব্যালটে সাজানো প্রথম প্রার্থীর প্রতীকের নাম ও প্রাপ্ত মোট ভোট কন্ট্রোল ইউনিটের ডিসপ্লেতে দেখা যাবে। একই সুইচ দ্বিতীয়বার চাপলে দ্বিতীয় প্রার্থীর, এভাবে একে একে সব প্রার্থীর প্রাপ্ত মোট ভোট দেখা যাবে।



পূর্ব থেকে সরবরাহ করা একটি ফরমে প্রাপ্ত ভোট সংখ্যাগুলো লিখে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে দেবেন। প্রতিটি বুথের ফলাফল একীভূত করে প্রিজাইডিং অফিসার অন্য একটি ফরমে তুলে স্বাক্ষর করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে তা পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।

No comments