Breaking News

সফলতার গল্প



‘বিসিএস ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতিতে প্রথম যা দরকার তা হলো ধৈর্য। এই পথ পাড়ি দিতে তা কখনো হারানো যাবে না। একইভাবে অন্য কাউকে অন্ধভাবে অনুসরণ করার কথা ভুলে যান। আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। স্বপ্ন পূরণে লেগে থাকতে হবে’— এই নীতি নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে সম্প্রতি ৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন অমৃত দেব নাথ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে সফলতার এই গল্প তুলে ধরছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।
Image result for সফলতার গল্প
অমৃত দেব নাথের জন্ম ও শৈশব গ্রামেই কেটেছে। কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে অমৃত দেব নাথ জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা অমূল্য দেব নাথ ব্যবসায়ী। মা অরুণা দেব নাথ একজন গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট অমৃত দেব নাথ। বাবা ঢাকায় ব্যবসা করতেন সেই সুবাদে ২০০৩ সাল ঢাকায় চলে আসতে হয়। নতুন পরিবেশও বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় প্রতিনিয়ত। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই গ্রামে। কিন্তু তার আর গ্রামে ফেরা হয়নি। বিজ্ঞান ভালো লাগত না কিন্তু বাবার ইচ্ছাতেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হয়। মতিঝিল মডেল হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে জিপিএ ৪.৮১ পেয়ে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেন। তারপর ভেবেছিলেন এবার বাণিজ্য বিভাগ নিয়ে পড়বেন। আবারও বাবার ইচ্ছাতেই বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে হয়। ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ হতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে জিপিএ ৪.৭০ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের সমাপ্তি টানেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে: বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়েছিলেন বলে তাই ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করেছিলেন। যখন দেখলেন উচ্চ মাধ্যমিকে এ-প্লাস পাননি তারপর সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচিং করেন। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যেকোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে চান্স পেতেই হবে। ভর্তির সুযোগ পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু যখন দেখেন যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক ইউনিটে মেধাতালিকায় ১০৬তম হয়েছেন। তখন আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন। তাই আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। বাবা ও শিক্ষকের পরামর্শে ভর্তি হয়েছিলেন রসায়ন বিভাগে।
স্বপ্নের শুরু যেখানে: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বেশ কিছু ভালো বন্ধু পেয়েছিলেন। তাদের পরামর্শে ২য় বর্ষে থাকাকালীন অবস্থা থেকেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস এর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। অনার্সে সিজিপিএ ৩.৪৩ পান। বিসিএস এর প্রস্তুতি নিতেন বলে বন্ধুরাও ক্যাডার তকমা লাগিয়ে দিয়েছিল। ইন্টারনেট, ফেসবুক থেকে ডাটা ম্যাটেরিয়ালস সংগ্রহ করে তা প্রিন্ট করে পড়তেন। বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি দেখে হতাশ হয়ে গেলেন। মাস্টার্স ও বিসিএস লিখিত পরীক্ষা একই সময়ে। মাঝে ১ দিন বিরতি। ফলাফলে দেখা গেলা মাস্টার্সে সিজিপিএ ২.৮০ আর বিসিএসে নন-ক্যাডার পেয়েছেন। তারপর নতুন উদ্যমে পড়ালেখা শুরু করলেন।
৩৭তম বিসিএস ভাইভাতে যখন অমৃতকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো— ‘কেনো প্রশাসন ক্যাডার তার প্রথম পছন্দ?’ বলেছিলেন— ‘বাবার স্বপ্ন’। ২০১৮ সালের ১২জুন, দুরুদুরু বুকে যা দেখলেন তাতে জীবনের হিসেব নিকেশ পাল্টে গেলো। প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
লক্ষ্য যাদের বিসিএস: অমৃত বিসিএস প্রত্যাশীদের জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে প্রথম যা দরকার তা হলো ধৈর্য। তাই ধৈর্য হারা হওয়া যাবে না। ছাত্রাবস্থা থেকেই একাডেমিক বইয়ের বাইরে প্রচুর বই পড়তে হবে। নিজে নোট করে পড়তে হবে। অন্য কাউকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা যাবে না। আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। স্বপ্ন পূরণে লেগে থাকতে হবে, তাহলে একদিন স্বপ্ন পূরণ হবে।

No comments