Breaking News

জানা-অজানা নিউজ (কিভাবে হলো বাংলা নামের উৎপত্তি?)

ঐতিহাসিকদের মধ্যে বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত বাঙালির আবাসভূমিকে বলা হত ‘বঙ্গদেশ’। ইংরেজিতে বলা হত বেঙ্গল। বেঙ্গল নামটা দিয়েছিল ইংরেজরা, তারা এটি নিয়েছিল পুর্তগিজের দেয়া ‘বেঙ্গালা’ শব্দ থেকে। বেঙ্গালা শব্দটি মুসলমানদের দেয়া ‘বঙ্গালহ’ শব্দের রূপান্তর মাত্র। ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পাঠান সুলতানগণই ‘বঙ্গালহ’ শব্দের ব্যবহার শুরু করেন। তবে তার আগে ত্রয়োদশ শতকের দু’জন বিদেশি পর্যটক মার্কো পোলো ও রশিদদ্দিন তাঁদের ভ্রমণ কাহিনীতে ‘বঙ্গাল’ নামটা ব্যবহার করেছিলেন।
১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর যখন বাংলা অধিকার করেন তখন তাকে ‘বঙ্গাল’ শব্দটা আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয়। বাংলা নামের উৎপত্তি প্রসঙ্গে আবুল ফজল বলেন, এ দেশের প্রাচীন নাম ছিল ধাষ। প্রাচীনকালের রাজার ১০ গজ উঁচু ও ২০ গজ প্রশস্ত প্রকাণ্ড ‘আল’ নির্মাণ করতেন। বঙ্গের সাথে আল (বঙ্গ+আল) যুক্ত হয়ে বাঙাল এবং বঙ্গালাহ নামের উৎপত্তি হয়েছে।
বঙ্গ একটি প্রাচীন নাম। ‘ঐতরেয় অরণ্যক’ নামক গ্রন্থে সর্বপ্রথম বঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়। বঙ্গের উৎপত্তি নিয়ে ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন সলিম বলেন যে, হযরত নূহ (আঃ)- এর পুত্র হিন্দ এর পুত্র বঙ্গ থেকে বাঙালি জাতির উৎপত্তি (রিয়াজ উস সালাতিন)। বোধায়নের ‘ধর্মসূত্রে’ বঙ্গ জনপদটিকে কলিঙ্গ জনপদের প্রতিবেশি বলা হয়েছে। ‘মহাভারতের’ আদিপর্বে বঙ্গ জনপদের উল্লেখ আছে। পাল বংশ যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন বঙ্গ জনপদ দুভাগে বিভক্ত হয়ে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ নামে পরিচিত হয়। বর্তমানকালের বঙ্গ অঞ্চল বলতে ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীকে বোঝায়।
মহাকবি কালিদাসের ‘রঘুবংশ’ কাব্যে রঘুর বিজয় কাহিনী হতে অনুমিত হয় বঙ্গের অবস্থান ছিল ভাগীরথী ও পদ্মার স্রোত অন্তর্বর্তী এলাকা অর্থাৎ ‘গঙ্গারিডই’ অঞ্চল। সুকুমার সেন মনে করেন যে বঙ্গ শব্দটি চীনা তিব্বতীয় এবং বঙ্গের অংশের অর্থ জলাভূমি। অর্থাৎ এ জলাভূমির জনগোষ্ঠীর আবাসভূমিই হলো বঙ্গ জনপদ। সম্ভবত বর্তমান মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, চব্বিশ পরগণা, ঢাকা, যশোর, পাবনা, বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর এবং রাজশাহী জেলার কিছু অংশ বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত ছিল।