Breaking News

ইন্টারভিউ উপযোগী কিছু প্রশ্নোত্তর

● সংস্কৃত কী বাংলা ভাষার জননী ?
উঃ অবশ্যই নয় । কারন বৈদিক ভাষা থেকে যে সংস্কৃত ভাষার উদ্ভব হয়েছিল তা কেবল লেখ্য ভাষায় পরিনত হয় । কথ্য ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকে পাঁচটি আঞ্চলিক প্রাকৃত ভাষাগুলি । ভাষার গতিশীলতায় তার পরিবর্তনের হাত ধরে তা এসে ঠেকে অপভ্রংশে এবং তার শেষ স্তরে অবহটঠ -এ । এই পাঁচটি রূপের মধ্যে একটি ছিল মাগধী প্রাকৃত । তা থেকে পরিবর্তিত হয়ে মাগধী  প্রাকৃত - অপভ্রংশ - অবহটঠ । আর এর থেকেই খ্রিষ্টিয় নবম শতকের দিকে বাংলা ভাষার জন্ম । কাজেই বলা যায় বাংলা ভাষার জননী মাগধী প্রাকৃত ।

● রামায়ণ , মহাভারতের মতো ভাগবত অতটা জনপ্রীয় না হবার কারন কী ?
উঃ ১• ভাগবত কেবল বৈষ্ণব সমাজেই প্রচলিত । তাই অন্য সম্প্রদায়ে সমাদর পায় নি ।
     ২• যদিও মালাধরের কাব্যে কৃষ্ণের মাধুর্য রূপ প্রকাশিত তবুও রামায়ণ বা মহাভারতের মতো অতটা ভক্তিভাব প্রকাশিত হয় নি ।

● সাহিত্য কী নিরপেক্ষ ?
উঃ বস্তুত এই বিশ্বে কোন কিছুই নিরপেক্ষ নয় । সমস্ত কিছুই কোন না কোন জিনিসকে অবলম্বন করে আবর্তিত হয় । সাহিত্যিকও তাঁর ব্যতিক্রম নয় । তাঁর সৃষ্ট রচনায় কিছুর পক্ষ অবলম্বন করেই তার বিষয়বস্তু গড়ে তোলে । তাই কোন সাহিত্যিক হয়ে ওঠে ফ্রয়েডিয় , কেউ বা মার্কসবাদী লেখক আবার কেউ বা রবীন্দ্র বিরোধী । কিন্তু লেখকের এই সচেতন ভাবে পক্ষ অবলম্বনই করে তোলে তাকে স্বতন্ত্র এবং রচনা হয় অমর ।

● আঞ্চলিক উপন্যাসগুলো প্রায়ই নদীকেন্দ্রিক হয় কেন ?
উঃ বাংলাদেশ নদীমাতৃক । নদীকে কেন্দ্র করেই গ্রাম্য জীবন আবর্তিত হয় । মানুষের সুখ দুখ নদীর জোয়ার ভাটার মতো ওঠা নামা করে প্রতিনিয়ত । তাই বেশীরভাগ আঞ্চলিক উপন্যাসগুলো নদীমাতৃক।

● সামাজিক নাটক ও সমাজ সমস্যামূলক নাটক কী এক ?
উঃ না এক নয় । সামাজিক নাটকে থাকে কোন পরিবার কেন্দ্রিক সমস্যা ও সংঘাত । তা কখনই বৃহত্তর সমাজের সমস্যাকে তুলে ধরে না ।
          কিন্তু সমাজ সমস্যামূলক নাটকে থাকে সমাজে প্রচলিত কোন গূঢ় সমস্যা ।

যেমনঃ " প্রফুল্ল " - সামাজিক নাটক ।
  " কুলিনকুল সর্বস্ব " -- সমাজ সমস্যামূলক নাটক ।

● মধ্যযুগীয় সাহিত্য মানবতাবাদ না দেববাদ ?
উঃ মধ্যযুগে রচিত বেশীরভাগ রচনাই দেবতা আশ্রিত । সে মঙ্গলকাব্যই হোক বা অনুবাদ সাহিত্যই হোক । দেবতা হয়েছে নায়ক , মুখ্য । দেবতার কথাই প্রাধণ্য পেয়েছে । কিন্তু সেই দেবতা অনেকটা ম্লান দেখায় চাঁদের পৌরুষত্বে কিংবা বেহুলার পতীপ্রেমে । শ্রীকৃষ্ণ দেবতা রূপে বৈষ্ণব পদে যতটা না ধরা পরে তার থেকে বেশী অনুভব জাগে লৌকিক মানবিক রূপে । তাই সংক্ষেপে বলাই যায় দেবতাকে আশ্রয় করে সাহিত্য রচিত হলেও তা আসলে মানুষেরই কথা ব্যক্ত হয়েছে ।

● বাংলায় রচিত সাহিত্যের আগে সংস্কৃত বা অপভ্রংশে রচিত সাহিত্য পড়ার যৌক্তিকতা কোথায় ?
উঃ কোন কিছুকে অবলম্বন করে , সামনে রেখে , তাকে আদর্শ হিসাবে পেলে পরবর্তী সৃজন অনেকটা সহজ যেমন হয় , তেমনি পরিপূর্ণতাও লাভ করে । বাংলায় রচিত হবার আগে সংস্কৃতের উজ্জ্বল সাহিত্য বা অপভ্রংশের শ্লোক গাথাগুলি বাংলা রচনাগুলিকে পরিপুষ্টে সহায়তা করেছিল । তাছাড়া , সংস্কৃতে রচিত হলেও রচনাকাররা ছিল এই বাংলারই । কাজেই উক্ত রচনাগুলি ও রচয়িতার সঙ্গে পরিচিত হওয়া সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত ।

● "সাহিত্য সমাজ জীবনের দর্পন"-- আপনার মত কী ?
উঃ আমি অবশ্যই মনে করি সাহিত্য সমাজ জীবনের দর্পন । সাহিত্য রচিত হয় সমাজের ঘটনা ও মানুষকে নিয়ে । তাই লেখকের সচেতনাতায় বা অচেতনাতায় সাহিত্যে ফুটে ওঠে সে সময়ের ছাপ । তাই বলাই যায় সাহিত্য সমাজ জীবনের দর্পন ।

● মধ্যযুগের ধারায় ব্যতিক্রমি সাহিত্যধারা কোনগুলি ?
উঃ দেববাদ প্রধান মধ্যযুগে রোসাঙ রাজসভায় মুসলিম কবিদের দ্বারা রচিত সাহিত্য ও গীতিকা জাতীয় সাহিত্য এই যুগের ব্যতিক্রমী । এখানে দেবতার পরিবর্তে লৌকিক মানব মানবীর প্রণয় হয়ে উঠেছে উপজীব্য ।

● ঐতিহাসিক উপন্যাস আর ইতিহাস কী এক -- উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও ।
উঃ না , এক নয় । ইতিহাসের নিরস তথ্যকে কল্পনায় ভর দিয়ে ঐতিহাসিক চরিত্রের সাথে ইতিহাসাশ্রিত চরিত্রের মেলবন্ধন ঘটিয়ে সরস ও প্রাণবন্ত করে তোলেন ঔপ্যনাসিক । তাই বলা যায় ঐতিহাসিক উপন্যাস ও ইতিহাস এক নয় ।

● ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের গুরুত্ব কী ?
উঃ যদিও কলেজটি নির্মিত হয়েছিল ইংরেজ সৈন্যদের এ দেশীয় ভাষা শিক্ষাদান ও এ দেশের ভৌগলিক , ঐতিহাসিক , সাংস্কৃতিক পরিচিতি ঘটানোর জন্যে , তবুও কলেজটির বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিশাল গুরুত্ববহন করে --
  ১• এর থেকেই শুরু হয় গদ্য সাহিত্যের পথচলা ।
  ২• স্কুল পাঠ্য ও শিশুশিক্ষা জাতীয় পুস্তক রচিত হতে থাকে ।
   ৩• পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের দিক নির্ণয়ে পথ প্রদশর্ক হয়ে ওঠে ।

♦ ইন্টারভিউ উপযোগী কিছু প্রশ্নোত্তর (মধ্যযুগ) ♦
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

১● কথাসাহিত্যের জন্ম হতে এত দেরি হল কেন বলে আপনি মনে করেন ?
উঃ কথাসাহিত্যের জন্ম হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে । তার পূর্বে বাংলা সাহিত্যের পদচারনা ও বিকাশ সবই দেবতাকেন্দ্রিক ও পদ্য মাধ্যমে । মানুষের জীবনদর্শন তখনও গৌন । সেই দৈব পরিমন্ডল ত্যাগ করতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে ঠেকে যায় এবং সাহিত্য প্রকাশের মাধ্যম গদ্য পরিনত হয় । জীবন এখন বড় হয়ে ওঠে , সাধারনের দুঃখ কথাই গুরুত্ব পেতে থাকে । ফলস্বরূপ উপন্যাসের জন্ম হয় ।

২● শূন্যপূরান কে কী মঙ্গলকাব্য বলা সঙ্গত ?
উঃ না । কারন শূন্যপূরানে ধর্ম দেবতার পূজা প্রচলনের কোন কথা নেই ।

৩● রোসাঙ্গ রাজসভার গুরুত্ব কী ?
উঃ যেখানে দেবতাই মুখ্য ও কবির একমাত্র লক্ষ্য দেবতার চরনে আত্মনিবেদন সেখানে দাঁড়িয়ে রোসাঙ রাজসভার কবিরা প্রাধন্য দিলেন লৌকিক নর নারীর প্রেম প্রনয়ের ক্ষেত্রে । অবশ্য মুসলিম ধর্ম ও তত্ত্বকথাও উঠে এসেছে । তাই বলা যায় মানব প্রেমের জয়গানের সূচনা রোসাঙ রাজসভাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিল । তাই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম ।

৪● চৈতন্য পরবর্তী বৈষ্ণব পদাবলীতে কী কী পরিবর্তন ঘটল ?
উঃ চৈতন্য দেবের ভক্তিবাদ ও মানবপ্রেমে গৌড়িয় বৈষ্ণব তত্ত্ববাদের সূচনা হল । ফলে বৈষ্ণব কবির পদে স্থান পেল ভক্তিবাদ ও কবি নিজে হয়ে উঠলেন লীলাশুক । নিজেকে শ্রীরাধিকা জ্ঞানে কৃষ্ণের প্রতি প্রেম নিবেদনই কবির আত্মভাবনায় প্রকাশিত হল ।

৫● বারমাস্যা কী ?
উঃ মূলত মঙ্গলকাব্যগুলিতে নায়িকার বার মাসের দুঃখ কষ্টের বর্ননাই হল বারমাস্যা ।

         তবে মঙ্গলকাব্য ছাড়াও বারমাস্যার পরিচয় পাওয়া যায় । যেমন - শ্রীরাধার বারমাস্যা , সীতার বারমাস্য ।

৬● মঙ্গলকাব্যগুলির উদ্ভব কেন ঘটেছিল বলে মনে করেন ?
উঃ তুর্কি আক্রমনোত্তর অবক্ষয়িত হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে ও হিন্দু ধর্ম রক্ষার্থে মঙ্গলকাব্যগুলির উদ্ভব ঘটেছিল ।

৭● রামপ্রসাদী সুর কী ?
উঃ শাক্ত পদকর্তা রামপ্রসাদ সেন তাঁর পদগুলিতে যে সাদামাটা সুর দিয়েছিলেন তাই রামপ্রসাদী সুর হিসাবে পরিচিত ।

৮● অন্নদামঙ্গল কাব্যকে কবি নতুন মঙ্গল বলেছেন কেন ?
উঃ এই কাব্যে দেখা যায় দেবীর স্নেহময়ী , মাতৃরূপিনী মূর্তি । তাছাড়া , এখানে কোন শাপভ্রষ্টের দেব বা দেবীর কাহিনী নেই । তাই কবি নিজে অন্নদামঙ্গল কাব্যকে নতুন মঙ্গল বলেছেন ।

৯● " এ যুগে জন্মগ্রহণ করিলে একজন ঔপন্যাসিক হইতেন " - মুকুন্দ চক্রবর্তী প্রসঙ্গে সমালোচকের এ হেন মন্তব্য আপনি কী সমর্থন করেন ?
উঃ হ্যা । কারন উপন্যাসের মধ্যে যে বিজ বা উপাদান গুলি থাকে তা কবির কাব্যেও বর্তমান । যেমন -- বাস্তবতার ছোঁয়া । কবির কাব্যে এই বাস্তবতার স্পষ্ট পরিচয় রয়েছে তাঁর আত্মবিবরনী অংশে । চরিত্রের বিকাশ ও বিশ্লেষণ -- কালকেতু ও ফুল্লরার উপাখ্যানে তা দেখা যায় । এছাড়া রচনাকারের জীবন দর্শনও ফুটে উঠেছে কবির অভয়ামঙ্গলে । তাই বলাই যায় মুকুন্দরামের মধ্যে ঔপ্যনাসিকের সমস্ত গুনই বিরাজমান ছিল ।

১০● শাক্ত পদাবলী অনেক বেশী বাঙালির প্রিয় হয়ে ওঠার কারন কী ?
উঃ শাক্ত গীতির সুরেলা স্পর্শে রয়েছে বাঙালি জীবনের মা ও মেয়ের স্নেহ বাৎসল্যের একান্ত আপনকথা । আর শ্যামাসঙ্গীত গুলিতে রয়েছে ভক্তের কৌতূহলী মায়ের চরনে নিবেদন । তাই শাক্ত পদাবলী বাঙালির হৃদয়ের এত কাছে এসেছে ।

  ♥♥ ইন্টারভিউ উপযোগী কিছু প্রশ্নোত্তর ♥♥
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

১● মনুষ্যেতর উপন্যাস সৃষ্টি না হবার কারন কী বলে আপনি মনে করেন ?

উঃ উপন্যাসে প্রতিফলিত হয় মানবজীবন । মানব জীবনের সুখ , দুঃখ , মনের দোলাচল ই থাকে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে । অর্থাৎ উপন্যাসের আবেদন মানব জীবনকে কেন্দ্র করে রচিত হয় বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে । তাই মনুষ্যেতর প্রানীকে কেন্দ্র করে ঘটনা আবর্তিত হয় না । সেই কারনে মনুষ্যেতর উপন্যাসের সৃষ্টি হয়নি ।

২● অনুবাদ সাহিত্য সৃষ্টির কারন কী ?

উঃ মূলত তুর্কি আক্রমনোত্তর বিধ্বস্ত বঙ্গীয় সমাজে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শঙ্কা ও ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল , সংস্কৃতির চূড়ান্ত হানী ঘটেছিল । তাই সংস্কৃতের বীর রসাত্মক কাব্যগুলিকে বাঙালি সংস্কৃতিতে মুড়ে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্যগুলি রচিত হয়েছিল । এছাড়াও পৃষ্ঠপোষক মুসলিম শাসকরাও এই সব হিন্দু পৌরানিক কাহিনীর প্রতি অনুরাগী ছিল ।

৩● ছোটগল্পের উদ্ভবের কারন কী ?

উঃ ঊনিশ শতকের শেষের দিকে সৃষ্টি হয় ছোটগল্পের । আসলে পরিবর্তনশীল সমাজে মানুষ হয়ে ওঠে কর্মমুখর , ব্যস্তময় । তাই সে চায় খন্ডাত্মকের মধ্যে অখন্ডের রূপ । অল্প সময়ে পরিপূর্ণ জীবনের আস্বাদ গ্রহণই হয়ে ওঠে পাঠকের মনের আকাঙ্খা । তাই উপন্যাসের বিস্তৃতকে ছোট করে উদ্ভব ঘটে ছোট গল্পের ।

৪● ধর্মমঙ্গলকে রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য কেন বলা হয় ?

উঃ ১● ধর্মমঙ্গলে রাঢ় অঞ্চলের সমাজ - সংস্কৃতির অপূর্ব প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় ।
     ২● ধর্মমঙ্গলের কাহিনি কেবল রাঢ় অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ।
     ৩● রাঢ় অঞ্চলের মানুষের মুখের রেঢ়ো ভাষা কাব্যে উপস্থিত ।
     ৪● ঐতিহাসিক চরিত্ররা রাঢ় অঞ্চলেরই ।

♣♣ স্পেশাল পেপার মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য যে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
  হবু শিক্ষক / শিক্ষিকার আছে তাদের জন্য ♣♣
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

প্রশ্নঃ তুর্কি আক্রমণ ও তার ফলাফল।

উঃ দ্বাদশ শতকের শেষে বা ত্রয়োদশ শতকের শুরুর দিকে ( ১১৯৯-১২০৪ খ্রীঃ ) তুর্কি নেতা ইকতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খিলজী বাংলার রাজধানী নবদ্বীপ আক্রমণ করে ।

এই আক্রমণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায় বাংলার সমাজ ,সাহিত্য , সংস্কৃতি , রাজনীতি ও ধর্মনীতির ক্ষেত্রে ।

প্রত্যক্ষ প্রভাব :-
   ১● বাংলার সমাজ সংস্কৃতিতে অস্থিরতা দেখা দিল ।
   ২● মুসলিম শাসণ প্রতিষ্ঠার ফলে ব্রাহ্মন্য সংস্কৃতিতে ভাঙনের সৃষ্টি হল । নিম্নবর্নীয় হিন্দুরা মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করতে লাগল ।
   ৩● একদিকে মন্দিরের ধ্বংস ও অন্যদিকে মসজিদের প্রতিষ্ঠা হতে লাগল । ফলে ধর্মীয় ক্ষেত্রেও মুসলিম ধর্মের বিস্তার ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেল ।
  ৪● সাহিত্য রচনার যে ধারার সূত্রপাত ঘটেছিল অস্থিরময় পরিবেশে তার ভাটা পড়ল ।

      তবে, এই তুর্কি আক্রমনের ফলে বঙ্গীয় সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্যও পরোক্ষ ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল ।
     ১● বাঙালি ঐকবদ্ধ্য হল ।
     ২● নিম্নবর্ন ও উচ্চ হিন্দুবর্নের মিলন ঘটল । ফলস্বরূপ মঙ্গলকাব্য ধারার সৃষ্টি হল ।
     ৩● বাঙালির কোমল ও নৈতিক আদর্শ এবং ভাঙন রোধের উদ্দেশ্যে অনুবাদ কাব্যগুলি রচিত হতে লাগল ।

প্রশ্নঃ ১২০১-১৩৫০ সময় কালকে বন্ধ্যাযুগ বলা যুক্তিযুক্ত কী না বলুন।

উঃ সময় যেমন নিত্য প্রবাহিত , শিল্পীর শৈল্পিক সত্ত্বাও তেমনি নিত্য চলমান । তুর্কি আক্রমন ও অস্থিরতা শিল্পী সাহিত্যিকদের সাময়িক বিচলিত করলেও স্তব্ধ করতে পারে না । ১২০১ - ১৩৫০ সময়কালে উল্লেখযোগ্য বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন পাওয়া যায় না ঠিকই কিন্তু তা বলে তা একেবার নিষ্ফলাও নয় , অনেক সংস্কৃত , অপভ্রংশে রচিত সাহিত্যের দেখা মেলে যা বাঙালি কবির দ্বারাই লিখিত। সদুক্তিকর্ণামৃত বা কবীন্দ্রবচন সমুচ্চয়ের শ্লোক গাথাগুলি অনেক বাঙালি কবির রচিত । তাছাড়া সংস্কৃত নাটক " পারিজাত হরণ " এই পর্বেরই ফসল । মনসামঙ্গল বা চন্ডীমঙ্গলের আদিকবি কানা হরিদত্ত বা মানিক দত্ত খ্রীষ্টিয় ত্রয়োদশ শতকেরই বলে মনে করা হয় । নব চর্যাপদকেও এই যুগের সৃষ্টি হিসাবে ধরা হয় । তাই এই অধ্যায়টিকে বন্ধ্যাত্ব বা অন্ধকার যুগে আখ্যায়িত করা উচিৎ নয় বলে মনে করি ।

প্রশ্নঃ চণ্ডীদাস সমস্যা।

উঃ ১৯০৯ খ্রীঃ বড়ু চন্ডীদাস রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য আবিষ্কারের সাথে সাথে দেখা দেয় চন্ডীদাস সমস্যা । চৈতন্যদেব যে চন্ডীদাসের পদ আস্বাদন করতেন তা বড়ু চন্ডীদাসের নয় বলে মনে হয় । তাছাড়া একাধিক নামাঙ্কিত চন্ডীদাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । পদাবলীর চন্ডীদাস , শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের চন্ডীদাস , সহজিয়া চন্ডীদাস ও পালা রচয়িতা চন্ডীদাস । এর ফলে চন্ডীদাস সমস্যা দেখা দেয় ।

প্রশ্নঃ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে রাধার যেখানে শেষ,পদাবলি রাধার শুরু।

উঃ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে রাধার একটি ক্রমবিকশিত রূপ লক্ষ্য করা যায় -- যার শেষদিকে পদাবলীর রাধার প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায় । শেষের দিকে রাধার যে বিরহার্তি তা স্থূল দেহ সম্ভোগের সীমানা পেড়িয়ে আত্মিক মিলনের সোপানে উপনীত হয়েছে , যেখান থেকে শুরু হয়েছে পদাবলীর রাধার ।

প্রশ্নঃ চৈতন্যপূর্ব,সমকালীন ও পরবর্তী বৈষ্ণব পদের বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য।

উঃ ১●চৈতন্য পূর্ব পদগুলিতে গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের উপস্থিতি অনুপস্থিত । অপরদিকে চৈতন্য পরবর্তী পদগুলি গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের আঁধারে রচিত ।
    ২● চৈতন্য পূর্বে রাধা অনেক বেশী যোগীনি ও অপরিনত । পরবর্তী চৈতন্য রাধার মনসতাত্ত্বিক প্রকাশ লক্ষ্যনীয় ।
     ৩● বাৎসল্য রসের প্রকাশ দেখা যায় না । কিন্তু চৈতন্য পরবর্তীতে বাৎসল্য রসে রচিত পদ লক্ষ্যণীয়।

No comments