নতুন বেতন স্কেল
গ্রেড থাকবে, শ্রেণি বাদ:
নতুন বেতন স্কেলে এখনকার মতোই ২০টি গ্রেড থাকবে। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেতন ও চাকরি কমিশন ১৬টি গ্রেডের প্রস্তাব করলেও সচিব কমিটি সরকারের আর্থিক সামর্থ্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যাশা বিবেচনা করে ২০টি গ্রেড বহাল রাখে।
তবে শ্রেণি (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) তুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ গ্রেড দিয়েই পরিচিত হবেন।
নতুন বেতন স্কেলে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়া হয়েছে। চাকরিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এ ধরনের স্কেল পেতেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভ থাকলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেছেন, ওই দুটি সুবিধা বাদ দেওয়া হলেও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যেসব নতুন সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে, তাতে তাঁরা বরং লাভবান হবেন। তাঁর মতে, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড কেউ পেতেন, কেউ বঞ্চিত হতেন। এখন বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সর্বজনীন করায় সবাই তা পাবেন এবং এটা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য বলে মন্ত্রিসভা মনে করে। তিনি আরও বলেন, ১ জুলাইয়ের আগে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তরা এটা পাবেন। তবে নতুন করে কেউ আর তা পাবেন না।
বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলো:
এই প্রথম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতনের ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরের ১ জুলাই সবার জন্য একই সঙ্গে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে। ২০ থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ। পঞ্চম গ্রেডে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। ৩ ও ৪ নম্বর গ্রেডে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ। গ্রেড ২-এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে ১ নম্বর গ্রেডে প্রবৃদ্ধি হবে না।
মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, মূল বেতনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে চক্রবৃদ্ধি হারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কারও মূল বেতন ১০ হাজার টাকা হলে এক বছরে তাঁর ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে ৫০০ টাকা। প্রথম বছর শেষে ওই ব্যক্তির প্রবৃদ্ধিসহ বেতন দাঁড়াবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। যেহেতু চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে, তাই দ্বিতীয় বছরে ওই ১০ হাজার ৫০০ টাকার ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে। এভাবে প্রতিবছরই বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
তিন বাহিনীর প্রধানদের বেতন ও মর্যাদা সমান:
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানেরা একই স্কেলে বেতন-ভাতা পাবেন। এর আগে সেনাপ্রধানের পদমর্যাদা ও বেতন অন্য দুই বাহিনীর প্রধানদের ওপরে ছিল। সেনাপ্রধান এখন ৪৫ হাজার টাকা মূল বেতন পান, অন্য দুই বাহিনীর প্রধানেরা পান ৪২ হাজার টাকা করে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তিন বাহিনীর প্রধানেরা বেতন পাবেন ৮৬ হাজার টাকা করে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের র্যাঙ্কও উন্নীত করা হবে।
নববর্ষ ভাতা চালু:
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, শিক্ষক, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের জন্য বাংলা নববর্ষ ভাতা চালুর বিষয়টি অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশে ধর্মভিত্তিক উৎসব রয়েছে। কিন্তু বাংলা নববর্ষ ভাতা সব সম্প্রদায়ের মানুষ একই সঙ্গে এবং একই সময়ে পাবেন। এই ভাতা হবে মূল বেতনের ২০ শতাংশ। মন্ত্রিসভা প্রশিক্ষণ ভাতা, ঝুঁকি ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা ভাতাসহ সব ধরনের বিশেষ ভাতা টাকার অঙ্কে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। প্রেষণ ভাতা তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বাড়িভাড়া এখনকার মতো মূল বেতনের শতাংশ হারে (কোথায় ৪০, কোথাও ৫০ শতাংশ) দেওয়া হবে।
বাড়ল অবসর সুবিধা:
নতুন বেতন-স্কেলে অবসর সুবিধা বাড়বে। ২০০৯ সালের বেতন স্কেলে সরকারি চাকুরেদের অবসরের সময় মূল বেতনের ৮০ শতাংশ ধরে পেনশন নির্ধারণ হতো। নতুন স্কেলে মূল বেতনের ৯০ শতাংশ ধরে পেনশন নির্ধারণ করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের বিশেষ দিক হচ্ছে, ওপরের ধাপের তুলনায় নিচের ধাপে বেতন বেশি বেড়েছে। তবে প্রতিবছর বার্ষিক প্রবৃদ্ধির যে হার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে মন্ত্রিসভা, তাতে ভবিষ্যতে বেতন কমিশন গঠনের প্রয়োজন না-ও হতে পারে। ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা পাচ্ছিলেন মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা, যা নতুন বেতনকাঠামো বাস্তবায়নের দিন থেকে বিলুপ্ত হবে।
No comments