Breaking News

সাম্প্রতিক দর্পণ


💢
নাগার্নো-কারাবাখ সংকটঃ ভূরাজনৈতিক সমীকরণ এখানে এসে জটিল আকার ধারণ করেছে
💢
সৌজন্য : আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি
ককেশাসে যুদ্ধক্ষেত্র, নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল। পাহাড়ী এবং ভারী-বনাঞ্চলের পরিপূর্ণ 4400 বর্গ কিলোমিটারের একটি ছিটমহল। প্রতিবেশী আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানদের মধ্যে কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থল।
🔺
নাগার্নো অর্থ- পার্বত্য। কারাবাখ অর্থ- কালো বাগান। এটি একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। আর আজারবাইজান জ্বালানি সম্পদ সমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বিশ্বের প্রথম তেল কূপ তারাই চালু করে বাকুর দক্ষিণে ১৮৪৮ সালে। আর্মেনিয়া সামরিক ভাবে একগুঁয়ে হলেও অর্থনৈতিক ভাবে আজারবাইজানের চেয়ে কম প্রভাবশালী।
🔻
আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ হিসাবে স্বীকৃত হলেও বিগত ৩ দশক ধরে এটি আর্মেনিয়ার দখলে। সেখানে মূলত জাতিগত আর্মেনিয়ানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। নব্বইয়ের দশকে আজারবাইজানের সাথে নাগর্নো-কারাবাখের আর্মেনিয়ানদের তুমুল সংঘাত হয়, যেখানে জড়িত ছিল আর্মেনিয় সেনাবাহিনী। যুদ্ধের একপর্যায়ে ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতির পর সেখানে আর্মেনিয়ান দখল জারি আছে।
🚩
বিবাদের সুত্রপাতঃ
১৯১৮ সাল থেকে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান রাশিয়ার সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীন ঘোষণা করেছিল। যদিও ১৯২০ সালে দক্ষিণ ককেশাসে (আজারবাইজান) সোভিয়েত বাহিনী আক্রমণ করে নিজেদের শাসন পুনরায় আরোপ করেছিল।
সেসময় সোভিয়েতরা আর্মেনীয় খ্রিস্টান অধ্যুষিত "নাগরোণো-কারাবাখকে" সোভিয়েত শাসিত আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের অংশ করে নেয়। কারণ আর্মেনিয়াতে রুশ শাসন পুনপ্রতিষ্ঠা হয় ১৯২২ সালে।
কিন্তু যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাঙনের সুর স্পষ্ট হয়, তখন আঁচ করা গিয়েছিল যে, নাগর্নো-কারাবখ বাকুর অধীনে থাকবে এবং একটা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি হবে। কারণ জাতিগত আর্মেনীয়রা আজারবাইজানী শাসন মেনে নেয়নি।
১৯৮৮ সালে, নাগরোনো-কারাবাখ আইনসভা আর্মেনিয়ান প্রজাতন্ত্রে যোগদানের পক্ষে ভোট দেয়, যে দাবি আজারবাইজান এবং মস্কো উভয়েরই প্রত্যাখ্যান করে।
💥
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে, ইয়েরেভান-সমর্থিত আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই অঞ্চলটি এবং সংলগ্ন আজারবাইজানীয় সাতটি জেলা দখল করে নিয়েছিল। যদিও এই অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যক মুসলিম আজারবাইজানীয় সংখ্যালঘুর বাস ছিল।
যুদ্ধে কমপক্ষে ৩০,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল এবং ১০ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।
🔰
১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিকভাবে তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। যদিও সেই অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন আজারবাইজানী কিছু এলাকা আর্মেনিয়ার দখলে থেকে যায়।
তারপর থেকে নাগর্নো-কারাবাখ এবং আজারবাইজান -আর্মেনিয়া সীমান্তের চারপাশে প্রায়শই সংঘাতের খবর পাওয়া যেত এবং বারবার শান্তি আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত OSCE Minsk Group -এর প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল।
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে, নাগর্নো-কারাবাখের কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর লড়াইয়ে উভয় পক্ষের কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছিল।
⛔
আর সর্বশেষ এই রবিবার সর্বশেষ সংঘর্ষে বেসামরিক নাগরিকসহ উভয় পক্ষের হতাহতের ঘটনা ঘটে।
📛♉♈
এবার দেখা যাক এই সংকট কিভাবে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক সমীকরণকে জটিল করে তুলেছে
➰❌❌
দীর্ঘকাল ধরে চলমান এই উত্তেজনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কিছুটা উদ্বেগের কারণ। কারণ এটি জ্বলানি সমৃদ্ধ অঞ্চল। এবং এই অঞ্চল বিশ্ব বাজারে তেল ও গ্যাস পাইপলাইনগুলির করিডোর হিসাবে কাজ করে। আরও কিছু বিষয়ঃ
🚩
আর্মেনিয়া বেশিরভাগ জনগণ অর্থোডক্স খ্রিস্টান।
★ককেশাসে নিজের প্রাধান্য বজায় রাখতে, নাগার্নো-কারাবাখ ইস্যুতে রাশিয়ার বরাবরই আর্মেনিয়ার পক্ষে।
★ তুরস্ক প্রকাশ্যে আজারবাইজানের পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
★ রাশিয়ার সাথে ঐতিহাসিক বিরোধের সাপেক্ষে আমেরিকা আজারবাইজানকে সমর্থন দেয়।
★ আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল আজারবাইজানী আর্মির বড় অস্ত্র সাপ্লাইয়ার।
★ ফ্রান্স আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র, কিন্তু ফ্রান্সে প্রভাবশালী আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীর বাস। তারা ফ্রেঞ্চ সরকারের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।
🚩
আজারবাইজানী বেশিরভাগ জনগণ জাতিতে তুর্কি, কিন্তু শিয়া মুসলমান (তুরস্কের বেশিরভাগ জনগণ সুন্নী মুসলিম)।
★ ইরান শিয়া মুসলমান অধ্যুষিত দেশ হলেও রাশিয়ার সাথে এর ব্যাপকভাবে ঘনিষ্ঠতা আছে। যদিও ইরানে অনেক জাতিগত আজারবাইজানীর বসবাস। এবং ইরানের আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান দুই দেশের সাথে সীমান্ত আছে।
★ সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধে তুরস্ক ও ইরান দুইটি ভিন্ন প্রতিপক্ষের সমর্থন।
★ আবার পূর্ব ভূমধ্যসাগর ইস্যুতে তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি দূরে ঠেলে দেয়, তবে তুর্কীকে কাছে টানতে একপায়ে খাড়া রাশিয়া। অন্যদিকে রাশিয়া-ইরান পুরাতন মিত্র৷ আর ইরান-তুরস্ক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। আবার তুর্কি হচ্ছে ন্যাটো সদস্য!
এমন প্রেক্ষাপটে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া দুই দেশই সামরিক আইন জারি করে পূর্ণ যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে অবস্থান করছে। এখন দেখা বিষয় কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।
অবলম্বনঃ তাস, বিবিসি, পলিটিকো, টিআরটি, এএফপি সহ আরও কিছু সংবাদ মাধ্যম।
💢
নাগার্নো-কারাবাখ সংকটঃ ভূরাজনৈতিক সমীকরণ এখানে এসে জটিল আকার ধারণ করেছে
💢
ককেশাসের যুদ্ধক্ষেত্র, নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল। পাহাড়ী এবং ভারী-বনাঞ্চলের পরিপূর্ণ 4400 বর্গ কিলোমিটারের একটি ছিটমহল। প্রতিবেশী আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানদের মধ্যে কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থল।
🔺
নাগার্নো অর্থ- পার্বত্য। কারাবাখ অর্থ- কালো বাগান। এটি একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। আর আজারবাইজান জ্বালানি সম্পদ সমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বিশ্বের প্রথম তেল কূপ তারাই চালু করে বাকুর দক্ষিণে ১৮৪৮ সালে। আর্মেনিয়া সামরিক ভাবে একগুঁয়ে হলেও অর্থনৈতিক ভাবে আজারবাইজানের চেয়ে কম প্রভাবশালী।
🔻
আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ হিসাবে স্বীকৃত হলেও বিগত ৩ দশক ধরে এটি আর্মেনিয়ার দখলে। সেখানে মূলত জাতিগত আর্মেনিয়ানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। নব্বইয়ের দশকে আজারবাইজানের সাথে নাগর্নো-কারাবাখের আর্মেনিয়ানদের তুমুল সংঘাত হয়, যেখানে জড়িত ছিল আর্মেনিয় সেনাবাহিনী। যুদ্ধের একপর্যায়ে ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতির পর সেখানে আর্মেনিয়ান দখল জারি আছে।
🚩
বিবাদের সুত্রপাতঃ
১৯১৮ সাল থেকে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান রাশিয়ার সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীন ঘোষণা করেছিল। যদিও ১৯২০ সালে দক্ষিণ ককেশাসে (আজারবাইজান) সোভিয়েত বাহিনী আক্রমণ করে নিজেদের শাসন পুনরায় আরোপ করেছিল।
সেসময় সোভিয়েতরা আর্মেনীয় খ্রিস্টান অধ্যুষিত "নাগরোণো-কারাবাখকে" সোভিয়েত শাসিত আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের অংশ করে নেয়। কারণ আর্মেনিয়াতে রুশ শাসন পুনপ্রতিষ্ঠা হয় ১৯২২ সালে।
কিন্তু যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাঙনের সুর স্পষ্ট হয়, তখন আঁচ করা গিয়েছিল যে, নাগর্নো-কারাবখ বাকুর অধীনে থাকবে এবং একটা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি হবে। কারণ জাতিগত আর্মেনীয়রা আজারবাইজানী শাসন মেনে নেয়নি।
১৯৮৮ সালে, নাগরোনো-কারাবাখ আইনসভা আর্মেনিয়ান প্রজাতন্ত্রে যোগদানের পক্ষে ভোট দেয়, যে দাবি আজারবাইজান এবং মস্কো উভয়েরই প্রত্যাখ্যান করে।
💥
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে, ইয়েরেভান-সমর্থিত আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই অঞ্চলটি এবং সংলগ্ন আজারবাইজানীয় সাতটি জেলা দখল করে নিয়েছিল। যদিও এই অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যক মুসলিম আজারবাইজানীয় সংখ্যালঘুর বাস ছিল।
যুদ্ধে কমপক্ষে ৩০,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল এবং ১০ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।
🔰
১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিকভাবে তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। যদিও সেই অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন আজারবাইজানী কিছু এলাকা আর্মেনিয়ার দখলে থেকে যায়।
তারপর থেকে নাগর্নো-কারাবাখ এবং আজারবাইজান -আর্মেনিয়া সীমান্তের চারপাশে প্রায়শই সংঘাতের খবর পাওয়া যেত এবং বারবার শান্তি আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত OSCE Minsk Group -এর প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল।
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে, নাগর্নো-কারাবাখের কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর লড়াইয়ে উভয় পক্ষের কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছিল।
⛔
আর সর্বশেষ এই রবিবার সর্বশেষ সংঘর্ষে বেসামরিক নাগরিকসহ উভয় পক্ষের হতাহতের ঘটনা ঘটে।
📛♉♈
এবার দেখা যাক এই সংকট কিভাবে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক সমীকরণকে জটিল করে তুলেছে
➰❌❌
দীর্ঘকাল ধরে চলমান এই উত্তেজনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কিছুটা উদ্বেগের কারণ। কারণ এটি জ্বলানি সমৃদ্ধ অঞ্চল। এবং এই অঞ্চল বিশ্ব বাজারে তেল ও গ্যাস পাইপলাইনগুলির করিডোর হিসাবে কাজ করে। আরও কিছু বিষয়ঃ
🚩
আর্মেনিয়া বেশিরভাগ জনগণ অর্থোডক্স খ্রিস্টান।
★ককেশাসে নিজের প্রাধান্য বজায় রাখতে, নাগার্নো-কারাবাখ ইস্যুতে রাশিয়ার বরাবরই আর্মেনিয়ার পক্ষে।
★ তুরস্ক প্রকাশ্যে আজারবাইজানের পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
★ রাশিয়ার সাথে ঐতিহাসিক বিরোধের সাপেক্ষে আমেরিকা আজারবাইজানকে সমর্থন দেয়।
★ আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল আজারবাইজানী আর্মির বড় অস্ত্র সাপ্লাইয়ার।
★ ফ্রান্স আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র, কিন্তু ফ্রান্সে প্রভাবশালী আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীর বাস। তারা ফ্রেঞ্চ সরকারের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।
🚩
আজারবাইজানী বেশিরভাগ জনগণ জাতিতে তুর্কি, কিন্তু শিয়া মুসলমান (তুরস্কের বেশিরভাগ জনগণ সুন্নী মুসলিম)।
★ ইরান শিয়া মুসলমান অধ্যুষিত দেশ হলেও রাশিয়ার সাথে এর ব্যাপকভাবে ঘনিষ্ঠতা আছে। যদিও ইরানে অনেক জাতিগত আজারবাইজানীর বসবাস। এবং ইরানের আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান দুই দেশের সাথে সীমান্ত আছে।
★ সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধে তুরস্ক ও ইরান দুইটি ভিন্ন প্রতিপক্ষের সমর্থন।
★ আবার পূর্ব ভূমধ্যসাগর ইস্যুতে তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি দূরে ঠেলে দেয়, তবে তুর্কীকে কাছে টানতে একপায়ে খাড়া রাশিয়া। অন্যদিকে রাশিয়া-ইরান পুরাতন মিত্র৷ আর ইরান-তুরস্ক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। আবার তুর্কি হচ্ছে ন্যাটো সদস্য!
এমন প্রেক্ষাপটে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া দুই দেশই সামরিক আইন জারি করে পূর্ণ যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে অবস্থান করছে। এখন দেখা বিষয় কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।

No comments