Breaking News

বাংলা সাহিত্যে প্রবাসী পত্রিকার গুরুত্ব

১৯০১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে (১৩০৮ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে) রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় "প্রবাসী" পত্রিকা প্রকাশিত হয়, অর্থাৎ এই পত্রিকাটির সূচনা সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এটি বাংলা ভাষায় প্রকাশিত একটি মাসিক পত্রিকা। ১৩০৮ বঙ্গাব্দে (১৯০১ খ্রিস্টাব্দ) এই পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
♥¤ পরিচিতি :-
"প্রবাসী" ছিল বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে ব্রিটিশ ভারতবর্ষে প্রবর্তিত একটি সাহিত্য সাময়িকী। বিশ শতকের বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পত্রিকার মধ্যে অন্যতম ছিল এটি। এলাহাবাদ কায়স্থ পাঠশালার (কলেজ) অধ্যক্ষ শ্রীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায় এলাহাবাদ থেকে এই পত্রিকাটি প্রকাশ শুরু করেন। বাংলার বাইরে থেকে, অর্থাৎ প্রবাস থেকে প্রকাশিত বলে ইনি এই পত্রিকার নাম দিয়েছিলেন "প্রবাসী"।

♥¤ পৃষ্ঠা সংখ্যা এবং বার্ষিক মূল্য :-
"প্রবাসী" পত্রিকার প্রথম সংখ্যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৪০টি। এই পত্রিকার বার্ষিক মূল্য ছিল আড়াই টাকা।

♠¤ সম্পাদনার ইতিহাস এবং প্রকাশক :-
"প্রবাসী" পত্রিকার প্রথম চারটি সংখ্যা কলকাতা থেকে মুদ্রিত হয়েছিল। এই পত্রিকার সম্পাদক ও মালিক ছিলেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় এবং কার্য্যাধ্যক্ষ ছিলেন আশুতোষ চক্রবর্তী। পরবর্তী সংখ্যা এলাহাবাদের "ইন্ডিয়ান প্রেস" থেকে মুদ্রিত হয়। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে পত্রিকাটি আবার কলকাতা থেকে মুদ্রিত হত। তাঁর মৃত্যুর পর, ১৩৫০ বঙ্গাব্দে এই পত্রিকাটির সম্পাদনা করেছিলেন তাঁর পুত্র কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায়। এই সময় পত্রিকাটি অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়। এরপর রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের জামাতা সুধীর চৌধুরী এই পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। এরপর অশোক চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ১৩৭২ বঙ্গাব্দে। ১৩০৮ বঙ্গাব্দ (১৯০১ খ্রিস্টাব্দ) থেকে শুরু করে ১৩৭২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত "প্রবাসী" পত্রিকা প্রায় ৬৪ (১৩০৮-১৩৭২) বছর প্রথমে অনেক বছর নিয়মিত এবং পরে কিছু বছর অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এর বেশিরভাগ সময় সম্পাদক ছিলেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। তিনি নারী-পুরুষের সমানাধিকারে বিশ্বাস করতেন এবং নারী-প্রগতি বিষয়ক লেখা ছাপতেন। অধিকন্তু তিনি নারীদের লেখায় উৎসাহিত করতেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে অক্টোবর (১৩৫০ বঙ্গাব্দের ১৩ই আশ্বিন) রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর "প্রবাসী" পত্রিকা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এই পত্রিকাটি আর প্রকাশিত হয় না।

♠¤ সাহিত্যে অবদান :-
রাজনীতি, সমাজনীতি, সঙ্গীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্য প্রভৃতি এই পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "গোরা" (১৯১০) উপন্যাস এই পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। ভাষাতাত্ত্বিক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং বাংলার যশস্বী মনীষীদের লেখা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হত। "প্রবাসী" পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ যেসব সাহিত্যিকদের লেখা ছাপা হয়েছিল তাঁরা হলেন, --- রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, কমলাকান্ত শর্ম্মা, দেবেন্দ্রনাথ সেন, নিত্যগোপাল মুখোপাধ্যায়, যোগেশচন্দ্র রায়, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এতে অজন্তা গুহার ফটো, জীববিজ্ঞানের ওপর নিবন্ধ এবং বিবিধ প্রসঙ্গ মুদ্রিত হয়েছিল। এতে রচনার শেষে লেখকের নাম মুদ্রিত হয়েছিল।

♠¤ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :-
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, --- "কলেজে পড়িবার কালে এবং তাহার পরে বহু বৎসর ধরিয়া বাঙ্গালা ভাষায় শ্রেষ্ঠ চিন্তা ও ভাব যাহা পাওয়া যাইতে পারে তাহা আমরা 'প্রবাসী'র মাধ্যমেই পাইতাম।"

♦¤ বৈশিষ্ট্য :-
"প্রবাসী" পত্রিকা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল বাংলার লোকসঙ্গীত সংগ্রহে বিশেষ ভূমিকা পালন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুপ্রেরণায় ১৩২২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যা থেকে এই পত্রিকায় "হারামণি" বিভাগ প্রবর্তিত হয়েছিল। এতে সারা বাংলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত লোকসঙ্গীত সংকলিত হত। "হারামণি''র প্রথম ভাগে গগন হরকরার "আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে" -- এই গানটি মুদ্রিত হয়েছিল।

♦¤ জনপ্রিয়তার কারণ :-
ছবি, অলংকরণ প্রভৃতিতে "প্রবাসী" পত্রিকা ছিল জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয়। অচিরেই পত্রিকাটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

♦¤ গবেষণা :-
''প্রবাসী'' পত্রিকা নিয়ে একটি গবেষণা আছে। এই গবেষণাটি "ভারতের শুধগঙ্গা" নামে "থিসিস সংগ্রহ"-এ দেওয়া আছে।


No comments