বাংলা সাহিত্যে দিগদর্শন পত্রিকার গুরুত্ব
¤ আবির্ভাব :-
বঙ্গভূমিতে প্রথম বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সাময়িকপত্র হল "দিগদর্শন"। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারক জোশুয়া মার্শম্যানের পুত্র জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় "দিগদর্শন" পত্রিকা প্রকাশিত হয়। হুগলীর শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগে শ্রীরামপুর থেকে প্রথম এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। এটি একটি মাসিক পত্রিকা।
♦¤ পরিচিতি :-
১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে মার্শম্যান-এর প্রচেষ্টায় হুগলীর "শ্রীরামপুর মিশন প্রেস" থেকে প্রথম "দিগদর্শন" পত্রিকা প্রকাশিত হয়। চার পৃষ্ঠার এই পত্রিকাটি ছিল বাংলা-ইংরেজি দ্বিভাষিক পত্রিকা। এখানে বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ একসঙ্গে প্রকাশিত হত। পত্রিকাটির মোট ২৬টি সংস্করণ বাংলাতে ও ১৬টি সংস্করণ বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষাতেই প্রকাশিত হয়েছিল। হুগলীর শ্রীরামপুরের সাংবাদিকেরা একটি নিজস্ব ভাষারীতি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। "দিগদর্শন" পত্রিকায় ছাত্রদের উপযোগী ইতিহাস, ভূগোল, দেশ-বিদেশের জ্ঞাতব্য তথ্য, কৌতুককর অথবা বিস্ময়জনক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাহিনী ও বিজ্ঞান সংক্রান্ত নানা রচনা থাকত। এখানে মূলত কোন সংবাদ প্রকাশ হত না।
♣¤ প্রকাশের উদ্দেশ্য :-
খ্রিস্টধর্ম প্রচার এবং যুবকদের মানসিক উৎকর্ষ বিধান করা ছিল প্রকাশক ও সম্পাদক জন ক্লার্ক মার্শম্যানের "দিগদর্শন" পত্রিকা প্রকাশের প্রধান উদ্দেশ্য।
♣¤ অবদান :-
যুবলোকের কারণ সংগৃহীত নানা উপদেশ "দিগদর্শন" পত্রিকায় অন্তর্ভুক্ত হত। এই পত্রিকায় ছাত্রদের উপযোগী ইতিহাস, ভূগোল, দেশ-বিদেশের জ্ঞাতব্য তথ্য, কৌতুককর অথবা বিস্ময়জনক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাহিনী ও বিজ্ঞান সংক্রান্ত নানা রচনা সহজ ভাষায় পরিবেশিত হত বলে তা স্কুল বুক সোসাইটির বিদ্যালয়সমূহে পাঠ্যপুস্তকরূপে প্রচলিত ছিল।
♥¤ গদ্যভাষার নমুনা :-
"ফিরিস্তা" নামে একজন মুসলমান ইতিহাসবেত্তা আপন গ্রন্থে লিখিয়াছেন যে, --- "সেইখানকার বায়ু মন্দ, এই প্রযুক্ত সেখানে লোকেরা বসতি ত্যাগ করিল এবং সেখান হইতে কাজকর্ম উঠাইয়া মোংটাঙ্গরা নগরে লইয়া গেল।"
♥¤ গুরুত্ব :-
কৌতূহল উদ্দীপক রচনা প্রকাশ করে এবং যুবকেরা যাতে বিপথগামী না হয়ে পড়ে সেজন্য নানান প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করে "দিগদর্শন" পত্রিকা একটি সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছিল। দ্বিতীয়ত, বাংলা গদ্যের প্রস্তুতি পর্বে এই পত্রিকা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
♠¤ প্রাধান্য এবং বিশ্লেষণ :-
"দিগদর্শন" পত্রিকায় সংবাদ অপেক্ষা ধর্মীয় নীতিকথা ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তথ্য পরিবেশনই পাধান্য পেত। ২৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পর এই পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। নীতি ও ধর্ম শিক্ষা প্রচার করায় তৎকালীন সরকার এই পত্রিকার উপর সদয় ছিল। সে অর্থে "দিগদর্শন" পত্রিকা ছিল না, ছিল নীতি-ধর্ম-তত্ত্বমূলক মাসিক সাময়িকপত্র।
No comments