Breaking News

বাংলা সাহিত্যে ভারতী পত্রিকার গুরুত্ব

"ভারতী' কলকাতার জোড়সাঁকোস্থ ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা। রবিবার, ১৫ই শ্রাবণ, ১২৮৪ বঙ্গাব্দে (২৯শে জুলাই, ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ) পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল।  এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। পত্রিকাটি প্রকাশের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে, সেকালের 'The Hindoo Patriot' পত্রিকায় সম্পাদক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এই বিজ্ঞাপনটি ছিল --- 'আগামী শ্রাবণ মাস হইতে 'ভারতী' নামে সাহিত্য-বিজ্ঞান-দর্শন প্রভৃতি নানা-বিষয়িণী একখানি মাসিক সমালোচনী পত্রিকা প্রকাশিত হইবে। এখনকার সুপ্রসিদ্ধ লেখকের মধ্যে অনেকে এই পত্রিকার সাহায্য করিবেন। ইহার কলেবর রয়েল ৮ পেজি ৫ ফর্ম্মা। মূল্য বার্ষিক ৩ টাকা। বিদেশে বার্ষিক ৷৵ ছয় আনা ডাক মাশুল লাগিবে। ইহা প্রতি মাসের ১৫ই প্রকাশ হইবে। যাঁহারা ইহার গ্রাহকশ্রেণীভুক্ত হইতে চাহেন, তাঁহারা জোড়াসাঁকো দ্বারকনাথ ঠাকুর লেন ৬নং বাটিতে শ্রীযুক্ত প্রসন্নকুমার বিশ্বাসের নামে পত্র লিখিবেন'।" --- শ্রীদ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সম্পাদক। 
♠¤ পরিচিতি :-
"ভারতী" পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় সম্পাদকীয় নিবন্ধে লেখা হয়েছিল --- "ভারতীয় উদ্দেশ্য যে কি তাহা নামেই প্রকাশ। ভারতীর এক অর্থ বাণী, আর এক অর্থ বিদ্যা, আর এক অর্থ ভারতের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। বাণীস্থলে স্বদেশীয় ভাষার আলোচনাই আমাদের উদ্দেশ্য। বিদ্যাস্থলে বক্তব্য এই যে, বিদ্যার দুই অঙ্গ, জ্ঞানোপার্জন এবং ভাবস্ফূর্তি। উভয়েরই সাধ্যানুসারে সহায়তা করা আমাদের উদ্দেশ্য। স্বদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবতাস্থলে বক্তব্য এই যে, আলোচনার সময় আমরা স্বদেশ-বিদেশ নিরপেক্ষ হইয়া যেখান হইতে যে জ্ঞান পাওয়া যায়, তাই নত-মস্তকে গ্রহণ করিব। কিন্তু ভাবালোচনার সময় আমরা স্বদেশীয় ভাবকেই বিশেষ স্নেহ দৃষ্টিতে দেখিব।"

♥¤ সম্পাদনা :-
ঠাকুরবাড়ির এই বিখ্যাত "ভারতী" পত্রিকাটি পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত জীবিত ছিল। এই পত্রিকাটির সম্পাদকেরা হলেন ---

(ক) ১২৮৪-১২৯০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত : সম্পাদক ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
(খ) ১২৯১-১৩০১ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত : সম্পাদক ছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী।
(গ) ১৩০২-১৩০৪ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত : সম্পাদক ছিলেন হিরন্ময়ী দেবী এবং সরলা দেবী।
(ঘ) ১৩০৫ বঙ্গাব্দে : সম্পাদক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
(ঙ) ১৩০৬-১৩১৪ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত : সম্পাদক ছিলেন সরলা দেবী।
(চ) ১৩১৫-১৩২১ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত : সম্পাদক ছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী।
(ছ) ১৩২২-১৩৩০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত : সম্পাদক ছিলেন মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় এবং সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়।
(জ) ১৩৩১-১৩৩৩ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত : সম্পাদক ছিলেন সরলা দেবী।

♥¤ সম্পাদনার কাহিনী :-
১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২০-২১শে এপ্রিল (৯-১০ই বৈশাখ), জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর স্ত্রী কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন। এই কারণে "ভারতী" পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর আগেই "ভারতী"-র বৈশাখ ১২৯১ সংখ্যার প্রায় অর্ধেকটা ছাপা হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণে বাকি অংশ-সহ পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল স্বর্ণকুমারী দেবীর সম্পাদনায়। তবে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ যুগ্মসংখ্যা হিসাবে।

★১২৯২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস থেকে ছোটদের জন্য "বালক" নামক পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। এর সম্পাদিকা ছিলেন জ্ঞানদান্দিনী দেবী এবং কার্যাধ্যক্ষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১২৯৩ বঙ্গাব্দে কার্য্যধ্যক্ষের পদ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবসর নেন। ফলে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর পক্ষে একা পত্রিকা দেখাশোনা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। পরে "ভারতী"-র সাথে এই পত্রিকাটির যুক্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নতুনভাবে প্রকাশিত এই পত্রিকার নামকরণ করা হয় "ভারতী" ও "বালক"। এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১২৯৩ বঙ্গাব্দের (১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ) বৈশাখ মাসে।

★১৩০০ বঙ্গাব্দে (১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ) এই পত্রিকা পুনরায় "ভারতী" নামে প্রকাশিত হতে শুরু করে।
১৩০২ বঙ্গাব্দে (১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ) স্বর্ণকুমারী দেবী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই কারণে তিনি "ভারতী"-র সম্পাদক থেকে পদ ত্যাগ করেন। ভারতীর বৈশাখ ১৩০২ সংখ্যা থেকে সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন  স্বর্ণকুমারী দেবীর'র দুই কন্যা হিরন্ময়ী দেবী ও সরলা দেবী। ১৩০৪ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত এই পত্রিকা এই দুই সম্পাদকের দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে।

★১৩০৫ বঙ্গাব্দে (১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে) এই পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা ছিল বৈশাখ ১৩০৫। নানাবিধ কাজ এবং তাঁর লেখার তাগিদের কারণে রবীন্দ্রনাথ এই পত্রিকাটি যথাযথভাবে চালাতে পারেন নি। যে কারণে বছরের শেষ চারটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল যুগ্মসংখ্যা হিসাবে। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত ভারতীর শেষ ফাল্গুন-চৈত্র ১৩০৫ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ৬ই বৈশাখে। এরপর তিনি সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেন। নতুনভাবে পত্রিকার দায়িত্ব পান সরলা দেবী।

★১৩১২ বঙ্গাব্দর ১৮ই আশ্বিন (৪ই অক্টোবর, ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ) সরলা দেবীর সাথে ড. পেয়ার মল-এর বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকে পত্রিকা সম্পাদনায় তিনি অনিয়মিত হয়ে পড়েন। বিবাহের পর তিনি পাঞ্জাবে চলে গেলে। ১৩১৪ বঙ্গাব্দে এই পত্রিকাটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই বছরের আষাঢ় মাস পর্যন্ত কোনো সংখ্যা প্রকাশিত হয়নি। জ্যৈষ্ঠ মাসে সরলা দেবী পাঞ্জাব থেকে কলকাতা আসেন। এই সময় এই পত্রিকাটি সম্পাদনার দায়িত্ব দেন সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়কে।

★ফলে "ভারতী" পত্রিকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ১৩১৪ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ্য মাসে পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সৌরিন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের হাতে অর্পণ করেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে ১৩১৪ বঙ্গাব্দের আশ্বিন সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর পত্রিকাটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। ১৩১৫ বঙ্গাব্দের (১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ) বৈশাখ মাস থেকে স্বর্ণকুমারী দেবীর সম্পাদনায় পুনরায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হতে থাকে। ১৩২১ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন।

★১৩২২ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩৩০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত এই পত্রিকার সম্পাদনা করেন মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় ও সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়।
★১৩৩১ বঙ্গাব্দে সরলা দেবী আবার পত্রিকার সম্পাদক হন এবং ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত তিনি "ভারতী" পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন। এরপরে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
♣¤ উল্লেখযোগ্য তথ্য :-
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর "জীবনস্মৃতি" (১৯২০ খ্রিস্টাব্দ /১৩২৭ বঙ্গাব্দ) প্রবন্ধগ্রন্থে লিখেছেন, --- "জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সম্পাদক না হলেও প্রকৃতপক্ষে 'ভারতী' জ্যোতিবাবুরই মানসকন্যা"।

♣¤ সাহিত্যে অবদান :-
"ভারতী" পত্রিকা প্রকাশের ফলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভা সাহিত্যের সকল শাখায় বিচরণের যথাযথ পরিবেশ খুঁজে পেল। "মেঘনাদবধ কাব্য" (১৮৬০) কাব্যগ্রন্থের সমালোচনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "ভারতী" পত্রিকাতেই প্রকাশ করেছিলেন। এই পত্রিকার পৃষ্ঠায় সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার সমালোচনাও ছাপা হয়েছিল। সাহিত্যিক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো অনেক শ্রেষ্ঠ গদ্যশিল্পী এই পত্রিকাটির মাধ্যমেই সাহিত্যজগতে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

★এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখা শুরু করেন। প্রথম সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথের ''ভারতী'' নামক কবিতা, ''মেঘনাদবধ কাব্য" (১৮৬০) কাব্যগ্রন্থের সমালোচনা, "ভিখারিণী'' (১৮৭৭) নামক গল্পের ১-৩ পরিচ্ছেদ প্রকাশিত হয়েছিল। সেকালের রীতি ছিল পত্রিকায় কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া সাধারণ লেখকদের নাম রচনার সাথে লেখা হতো না। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় যে ভূমিকা প্রকাশিত হয়েছিল, তার সাথে কোনো নাম নেই। এর পরে ছিল রবীন্দ্রনাথের ''ভারতী'' নামক কবিতা। কিন্তু কবি হিসাবে রবীন্দ্রনাথের নাম ছিল না। কারণ রবীন্দ্রনাথ তখনও বিশিষ্ট ব্যক্তি হয়ে উঠেন নি। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এক তরুণ লেখক গোষ্ঠী। "ভারতী গোষ্ঠী" নামে পরিচিত এই লেখকগোষ্ঠীর সদস্যরা ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, অসিতকুমার হালদার, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ বাগচী, চারুচন্দ্র রায়, করুণাধন চট্টোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, অনুরূপা দেবী, অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ, অমৃতলাল বসু, ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, কালিদাস রায়, গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার, দীনেশচন্দ্র সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, নিরূপমা দেবী, যদুনাথ সরকার, শিবনাথ শাস্ত্রী, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রমেশচন্দ্র দত্ত প্রমুখ। এঁরা সকলেই ছিলেন রবীন্দ্র গোষ্ঠীভুক্ত। এঁরা ছাড়াও এই পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন প্রমথ চৌধুরী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও মোহিতলাল মজুমদার। প্রায় পঞ্চাশ বছর এই পত্রিকাটির অস্তিত্ব ছিল।
★দীর্ঘ ৪৯ বছরের ইতিহাসে "ভারতী" পত্রিকা একাধিক সম্ভাবনাময় লেখকের উত্থানে সাহায্য করে। সরলা দেবী, স্বর্ণকুমারী দেবী, হিরণ্ময়ী দেবী প্রমুখ নারীদের সম্পাদনায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে এই পত্রিকা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসংখ্য গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় এখানে। প্রকাশিত হয় স্বর্ণকুমারী দেবীর উপন্যাস, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানা রচনা এবং প্রমথ চৌধুরীর গদ্যও।
★১৩১৪ বঙ্গাব্দে এই "ভারতী" পত্রিকাতেই কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস "বড়দিদি" কয়েকটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ১৩১৪ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে "ভারতী" পত্রিকার সম্পাদিকা সরলা দেবী লাহোর থেকে কলকাতা ফিরে পত্রিকার ভার সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের ওপর অর্পণ করেন। তাঁর আগ্রহে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় সংখ্যায় তিন ভাগে "বড়দিদি" প্রকাশিত হয়। প্রথম দুই সংখ্যায় লেখক হিসেবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম ঊহ্য রাখা হলে এই লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কি না তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরী হয়। আষাঢ় সংখ্যায় বড়দিদির লেখক হিসেবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রকাশ করা হয়। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে "যমুনা'' পত্রিকার সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ পাল শরৎচন্দ্রের নিষেধ সত্ত্বেও এই উপন্যাস পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন।
♦¤ ইতিহাস :-
ভারতী পত্রিকার পৃষ্ঠপোষণা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সক্রিয় ভূমিকা ছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রস্তাবে ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে জুলাই (১২৮৪ বঙ্গাব্দের ১৫ই শ্রাবণ) দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পাদনায় এই পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

★১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত "ভারতী" পত্রিকার সম্পাদকীয় কার্যালয় ছিল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। সরলা দেবী রামভূজ দত্তচৌধুরীকে বিবাহ করে পাঞ্জাবে চলে যাওয়ার সময় "ভারতী"-র সত্ত্ব প্রদান করে যান মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ঠাকুরবাড়ির ঠিকানা থেকে "ভারতী"-র সম্পাদকীয় কার্যালয় উঠে আসে ২২ সুকিয়া স্ট্রিটে (কৈলাস বসু স্ট্রিট)। নলিনীকান্ত সরকারের লেখা থেকে জানা যায় যে তিনতলা এই বাড়িটির এক তলায় ছিল কান্তিক প্রেস, দোতলায় ছাপাখানা এবং তিন তলায় ছিল "ভারতী"-র কার্যালয়। মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন কান্তিক প্রেস ও ভারতী উভয়েরই মালিক। মণিলালের সঙ্গে যোগ দিলেন তাঁর সাহিত্যিক বন্ধু সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়। দুই বন্ধুর যুগ্মসম্পাদনায় কান্তিক প্রেস থেকেই নবপর্যায় "ভারতী" পত্রিকার আত্মপ্রকাশ।  এই সময়ই এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে রবীন্দ্রানুসারী "ভারতী গোষ্ঠী"।

No comments