Breaking News

জানা-অজানা নিউজ ( স্বাধীনতা সংগ্রামে মহানায়কের নেতৃত্ব ও অবদান:)

স্বাধীনতা সংগ্রামে মহানায়কের নেতৃত্ব ও অবদান:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে দীর্ঘ সংগ্রামের অগ্রভাগে থেকে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সংগ্রামী জীবনের শ্রেষ্ঠ ফসল আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সামরিক ও স্বৈরশাসক এদেশের মসনদ দখল করেছে। তারা কৌশলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। কিন্তু সেই বিকৃতি ও ষড়যন্ত্র ধোপে টেকেনি। সমস্ত অন্ধকার দূরীভূত হয়েছে, তার ভিতর থেকে অর্জিত হয়েছে একটি আলোকিত ইতিহাস। মিথ্যাকে দূর করে সত্য প্রকাশিত হয়েছে। ইতিহাস থেকে যতই বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, ইতিহাস আপন নিয়মে তাঁকে মহীয়ান করে তুলেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের জন্য তিনি জাতির পিতা হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ধাপে ধাপে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দান করে তিনি চলে আসেন নেতৃত্বের শীর্ষস্থানে। একটি নতুন রাষ্টের জনক হিসেবে তাঁকে ভূষিত করা হয়েছে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’র অভিধায়।
বাংলাদেশ নামক স্বপ্ন অনেকেই দেখেছেন কিন্তু বাস্তবে রুপ দিতে পারেননি। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমান। এ দেশের স্বাধিকার সংগ্রাম ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তিনি জীবনের দীর্ঘ সময় জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। বার বার মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন। সামরিক জান্তা তাঁকে একাধিকবার ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বিচারের প্রহসন করে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানোর পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তাদের সেসব ষড়যন্ত্র বাংলার কোটি কোটি মানুষের ভালবাসার কাছে পরাভূত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সূত্রপাত ছাত্রজীবনে মুসলিম লীগের রাজনীতির পতাকা তলে। তিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাণপুরুষ। দেশ ভাগের পর ধীরে ধীরে তরুণদের সংগঠিত করতে থাকেন। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ গঠনে পালন করেন প্রত্যক্ষ ভূমিকা। ভাষা-আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠনে রাখেন বিশেষ অবদান। এরপর মন্ত্রী হিসেবে জনগণের কাছে পৌঁছান।
তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন ১৯৬৬ সালে, তাঁর ৬ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে। এই ৬ দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানি সরকার তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামী করে। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় বাংলার কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসায় তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পরিগণিত হন। তাঁর দল আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি যে ভাষণ প্রদান করেন তা ছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। এই ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি মুক্তির মূলমন্ত্র খুঁজে পেয়েছিল, এজন্য তারা ঝাঁপিয়ে পরেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে। তাঁর মত নেতা এদেশে আর কেউ জন্মগ্রহণ করেননি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এর ভাষায়, “শেখ মুজিবের আবির্ভাব বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে সবচাইতে বড় ঘটনা।... বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয় পরিচিতি নির্ধারণে তাঁর চাইতে বেশি অবদান রেখেছেন এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।”
পাকিস্তানি সেনারা যখন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে তখন তিনি গভীর রাত্রিতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার তাঁকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল। কিন্তু সম্পূর্ণ জাতি তখন যুদ্ধে সংগ্রামে প্রেরণাপুরুষ হিসেবে তাঁকেই সামনে রেখেছিল। তাঁর নামেই পরিচালিত হয়েছে বাংলা মুক্তি সংগ্রাম। মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনে বজ্রধ্বনি তুলেছে “তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব।” কোটি কোটি বাঙালি নামাজে বসে প্রার্থনা করেছে তাঁদের প্রিয় নেতা যেন অক্ষত শরীরে দেশে ফিরে আসে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়।
পাকিস্তানি কুচক্রী সরকার তাঁকে প্রহসনের বিচার করে ফাঁসিতে ঝুলাতে চেয়েছিল। শুধু তাই নয় তাঁর কবর পর্যন্ত খুঁড়া হয়েছিল। তিনি তাতেও বাংলার স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি। বরং বলেছিলেন, “আমাকে মেরে ফেলে দাও আমার আপত্তি নেই, কিন্তু আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে পৌঁছে দিও।” ১৯৭২ সালের ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু যেদিন দেশে ফিরে এলেন আবেগ-উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল বাংলার অগণিত মানুষ। তিনি সেদিন আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, আমি বাঙালি, আমি মুসলমান।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অতুলনীয়। এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর মতো অবদান আর কেউ রাখতে পারেননি। সমস্ত বাঙালি তাঁরই নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল এবং কঠিন আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জন করেছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বস্তুত, বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।